গাইবান্ধায় গেছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিনিধিদল
গাইবান্ধায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির একটি প্রতিনিধিদল।
আজ মঙ্গলবার সকালে জেলার গোবিন্দগঞ্জের মাদারপুর ও জয়পুরপাড়া সাঁওতালপল্লী পরিদর্শন করে দলটি।
ওই সময় নির্যাতনের শিকার সাঁওতালদের কাছ থেকে গণশুনানি নেওয়া হয়। গণশুনানিতে তাদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতনের কথা নির্মূল কমিটির নেতাদের কাছে তুলে ধরেন সাঁওতালরা।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি শামসুল হুদা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, মাহবুবুর রশিদ প্রমুখ।
বিচারপতি মানিক সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাস্থল সরেজমিনে পরিদর্শন করতে ও সত্য জানতেই তাঁরা এসেছেন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে দাবি জানানো হবে।
বিচারপতি মানিক আরো বলেন, সাঁওতাল অত্যন্ত ঐতিহ্যবাহী সম্প্রদায়। তারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে তীর-ধনুক নিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে হানাদারদের ওপর আক্রমণ চালায়। সে সময় অনেক সাঁওতাল শহীদ হন। ব্রিটিশ আমলে তাঁরা মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে সংগ্রাম করেছিলেন। তেভাগা আন্দোলনেও সাঁওতালদের অবদান ছিল। এমন ঐতিহ্যবাহী সম্প্রদায়কে ভুলে যাওয়া যাবে না।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, ‘আমরা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ওপর যে অত্যাচার নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে তা সরেজমিনে দেখা ও গণশুনানি করার জন্য এখানে এসেছি।’
সাঁওতালদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মাহাবুবুর রশিদ জানান, জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার ও নির্বাচনের পরে শুরু হওয়া বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনাগুলো নজরদারিতে রেখেছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এ ছাড়া এসব নির্যাতনের ঘটনার ওপর প্রতিবেদনসহ সত্য সন্ধানী বই বের করা হয়েছে। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কাজ এখন অনেক প্রসারিত।
গত ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ আখ খামারের জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সেখানে বসবাসরত প্রায় আড়াই হাজার সাঁওতাল বসতি পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় বাঙালি-পুলিশ ও সাঁওতালদের মধ্যে সংঘর্ষে তিন সাঁওতাল নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। মামলা করা হয় শতাধিক সাঁওতালের নামে।
সাঁওতালদের ওপর হামলা, লুটপাট ও ঘরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগেও অজ্ঞাতপরিচয় ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।