নতুন আসা রোহিঙ্গারা শরণার্থীর মর্যাদা পাবে না : মন্ত্রী
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চল থেকে বাস্তুভিটা ছেড়ে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা নিরীহ মুসলিম রোহিঙ্গাদের ‘কিছু অংশকে মানবিক কারণে’ আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
তবে ‘আপাতত’ এসব রোহিঙ্গাকে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে না বলে স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। এ সময় তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ আলোচনাই সমাধানের একমাত্র পথ।
আজ বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাঙ্গেরি সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনেও সাংবাদিকরা রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন।
এ দুটি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমান রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে এসব কথা বলেন।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ভারত, চীনের রাষ্ট্রদূত, হাই কমিশনারসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মিয়ানমারের সীমান্ত অঞ্চলে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিনিয়ত হামলা চালাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হচ্ছে। এতে বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। সেখানকার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল ধ্বংস করে দিচ্ছে, নারী-পুরুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, এমনকি অবিবাহিত নারীদের ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে এসব প্রতিবেদনে।
এ নিয়ে জাতিসংঘসহ সারা বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সোচ্চার ভূমিকার মধ্যেই গতকাল বুধবার কক্সবাজারে একটি অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে।
বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমারের মংডু অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজিপির আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার সন লুইন স্বীকার করেন, দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সীমান্ত অঞ্চলে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে, এর ফলে সেখানকার নিরীহ মুসলিম রোহিঙ্গারা গৃহহারা হচ্ছে।
আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং মিয়ানমান-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
এ এইচ মাহমুদ আলী বলেন, ‘মিয়ানমার যেভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এসেছে, সেখানে এই ধরনের সমস্যা তৈরি হয় দুটি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে। এটি অবশ্যই সমাধান করা সম্ভব। শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধানই হলো একমাত্র পথ।’
প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলন
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাঙ্গেরি সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ২৭ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত হাঙ্গেরি সফর করবেন।
সংবাদ সম্মলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্ক আছে বিজিবি।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা গণণা করা হয়েছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে আর শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, ‘কিছু এই ধরনের কেইস এসেছে, যেগুলো তারা বা কেউই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে… ঢুকতে না দিয়ে পারা যায়নি। বাংলাদেশ সরকার করেছে, সেটা হলো তাদের সেনসাস এটা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে কয়েক লাখ তো হবেই।
প্রধানমন্ত্রীর হাঙ্গেরি সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বুদাপেস্ট ওয়াটার সামিটে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।