কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধের সাক্ষীকে হত্যার হুমকি
জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা সেলিম সরকারের পরিবারকে টেলিফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা চেয়ে তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর ও ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ও ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ’ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সভাপতি সেলিম সরকার বিষয়টি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবু আহাম্মদ আল মামুনের সাথে দেখা করেন।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সেলিম সরকার জানান, গত ১৫ এপ্রিল থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরে মোহাম্মদী হাউজিং লিমিটেডের ৬ নম্বর সড়কের ২৩৭ নম্বর বাসায় পরিবারের সাথে অবস্থান করছিলেন। ১৮ এপ্রিল রাত ৮টা ২ মিনিটে তাঁর স্ত্রী ঝর্ণা বেগমের মুঠোফোনে ফোন করে তাঁকে ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
‘ফোনে ওই ব্যক্তি যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কিছু না বলার হুমকি দিয়ে কাফনের কাপড় কিনে রাখতে বলে। এরপর থেকে আমি ও আমার পরিবার আতঙ্কিত এবং নিরাপত্তাহীনতায় আছি।’ বলেন সেলিম সরকার।
এ ঘটনার পর সেলিম সরকার মোহাম্মদপুর থানায় রাতেই একটি জিডি (নম্বর- ১২২৮) করেন। একই ঘটনায় তিনি হুমকিদাতা বুলবুল সরকার, বাবুল সরকার, আমজাদ হোসেন টুটুল ও লিটন সরকারের নামোল্লেখ করে গত ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় আরেকটি জিডি (নম্বর- ১৩২৯) করেন।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় সেলিম সরকার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার সেলিম সাজ্জাত ও ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের’ সদস্য সচিব ফজলুল হককে সাথে নিয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবু আহাম্মদ আল মামুনের সাথে দেখা করেন। এ সময় তাঁরা নিরাপত্তা দাবি করেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবু আহাম্মদ আল মামুন এনটিভি অনলাইনকে জানান, ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুক্তিযোদ্ধা সেলিম সরকার সদর উপজেলার চর গোবদিয়া গ্রামের মৃত কামাল সরকারের ছেলে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ৪ জুন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। তাঁর বিরুদ্ধে আরো অনেকের সাথে মুক্তিযোদ্ধা সেলিম সরকারও সাক্ষী দেন। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুটিতে মৃত্যুদণ্ড, দুটিতে যাবজ্জীবন ও একটিতে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ৬ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন।
১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।