জুবায়ের হত্যা মামলায় ৫ ফাঁসি, ৬ যাবজ্জীবন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলার রায়ে পাঁচজনকে ফাঁসি ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় দুজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার দুপুর ১টার দিকে ঢাকার ৪ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ বি এম নিজামুল হক এ রায় ঘোষণা করেন। আসামিরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী।
ফাঁসির দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের আশিকুল ইসলাম আশিক, খান মোহাম্মদ রইছ ও জাহিদ হাসান, দর্শন বিভাগের রাশেদুল ইসলাম রাজু এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাহবুব আকরাম। এই পাঁচজনই পলাতক রয়েছেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র শফিউল আলম সেতু ও অভিনন্দন কুণ্ডু অভি, দর্শন বিভাগের কামরুজ্জামান সোহাগ ও ইশতিয়াক মেহবুব অরূপ, ইতিহাস বিভাগের মাজহারুল ইসলাম এবং অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র নাজমুস সাকিব তপু। এর মধ্যে অরূপ পলাতক, বাকিরা কারাগারে রয়েছেন।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র নাজমুল হাসান প্লাবন ও ইতিহাস বিভাগের মাহমুদুল হাসান মাসুদকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাছলিমা ইয়াসমিন দিপা ও আসামিপক্ষের আইনজীবী জামাল উদ্দিন খন্দকার আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাছলিমা ইয়াসমিন দিপা বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত এ রায় দিয়েছেন। রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।
তবে রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘আদালত কোনো কিছুই প্রমাণ করতে পারেননি। ঘটনাস্থলে যে ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন, তাঁকে আদালতে উপস্থিত করা হয়নি। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’
এর আগে সকালে কারাগারে থাকা সাত আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁদের এজলাসে তোলা হয়।
গত বুধবার ৪ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার তারিখ ছিল। কিন্তু আসামি আদালতে উপস্থিত না থাকায় রায় ঘোষণা করেননি আদালত।
২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগের কর্মী জুবায়েরকে কুপিয়ে জখম করে তাঁরই সংগঠনের একটি পক্ষ। পরে তাঁকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন রাতেই তাঁকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই ৯ জানুয়ারি ভোরে মারা যান জুবায়ের। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার হামিদুর রহমান আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
জুবায়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলের ছাত্র ছিলেন। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়ায়। তাঁর বাবার নাম তোফায়েল আহমেদ, মা হাসিনা আহমেদ।
২০১২ সালের ৮ এপ্রিল এই ১৩ ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মীর শাহীন শাহ পারভেজ। পরে আন্দোলনের মুখে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ২৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। আসামিদের মধ্যে মাহবুব আকরাম ও নাজমুস সাকিব তপু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে আগে থেকেই পলাতক ছিলেন দুজন। পরে আশিক, রিয়াজ, আকরাম ও অরূপ শুনানি চলাকালে কাঠগড়া থেকে পালিয়ে যান।