‘রাষ্ট্র ব্যর্থ’, আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তায় গারো ছাত্ররা
রাজধানীর কুড়িলে মাইক্রোবাসে গারো নারী ধর্ষণের ঘটনার পর নিজেরাই আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (গাসু)। রাজধানীতে কর্মজীবী গারো নারীদের নিরাপত্তা দিতে কাজ করবে ওই সংগঠনের কর্মীরা। ‘রাষ্ট্র ব্যর্থতার পরিচয়’ দেওয়ায় তাঁরা এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সভাপতি ডেনী দ্রং এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গারো মেয়েরা রাজধানীতে বিভিন্ন শপিং মল ও বিউটি পার্লারে কাজ করে। সামনে রমজান মাস আসছে, এরপর ঈদ। এ সময় গারো মেয়েদের ব্যস্ততা আরো বেড়ে যাবে। কাজ করতে হবে মাঝরাত পর্যন্ত। আমরা চাই না আর কোনো গারো বোনের ওপর নেমে আসুক ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। রাতে কাজ করে বাড়ি ফেরার পথে গারো মেয়েটি সাহায্য চাইলে আমাদের কর্মীরা তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে।’
গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন নিজেদের ফেসবুক পেজেও এ-সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ের ধর্ষণের ঘটনাগুলো রাষ্ট্রের জন্য ধিক্কার ও ন্যক্কারজনক এবং নারীদের সুরক্ষা দিতে রাষ্ট্র তাঁর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ধর্ষিত হয়েছে আমাদের আদিবাসী বোন, গারো বোন। যেহেতু রাষ্ট্র কিংবা প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, তাই আমাদের নিরাপত্তা আমাদেরকেই ব্যবস্থা করতে হবে।’ এতে আরো বলা হয়, ‘আদিবাসী বোন, গারো বোনদের উদ্দেশে জানাতে চাই, আপনারা যে সময়ই নিরাপত্তা চাইবেন আপনাদের কাছে পৌঁছে যাবে গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের (গাসু) একঝাঁক নিবেদিত প্রাণ। আপনাদের কর্মস্থল থেকে আবাসস্থল পর্যন্ত না পৌঁছে তারা নিজ আবাসে ফিরবে না।’
‘আদিবাসী নারী নিরাপত্তা’ শীর্ষক এ কর্মসূচিতে ঢাকাকে চারটি এলাকায় ভাগ করে দায়িত্বরত গাসু সদস্যদের ফোন নম্বর দেওয়া আছে। আর আছে একটি সমন্বয়ক সেল।
কতদিন এ নিরাপত্তা দেওয়ার কাজটি চলবে জানতে চাইলে ডেনী দ্রং বলেন, ‘রমজান ও ঈদে ব্যস্ততা বেশি থাকে। তাই আপাতত এ সময়টা পর্যন্ত আমরা দেখব। আমরা আসলে রোগীর চিকিৎসা না করে রোগ প্রতিরোধ করতে চাচ্ছি। তাই এটাও এক ধরনের শুরু।’ তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক যে ঘটনা ঘটছে, পহেলা বৈশাখে যা ঘটল তা থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে।’
ডেনী আরো বলেন, ‘নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশের কর্মপরিকল্পনা দুর্বল মনে হয়েছে। মোটরসাইকেল, রিকশা পরীক্ষা করা হয় অথচ প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাস তেমন পরীক্ষা করা হয় না। সেদিন এমন পরীক্ষা করা হলে হয়তো ঘটনাটা ঘটত না।’
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ২১ বছর বয়সী এক গারো নারীকে পাঁচ যুবক জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে গণধর্ষণ করে। পরে মধ্যরাতে তাঁকে রাস্তায় ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। গত শুক্রবার নির্যাতিত ওই নারী ভাটারা থানায় মামলায় করেন। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে দায়ী ব্যক্তিদের আটক করতে পারেনি পুলিশ।
নিরাপত্তা কর্মসূচি
নারীদের নিরাপত্তা দেওয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজধানীকে চারটি জোনে ভাগ করেছে গাসু।
জোন ‘এ’-তে আছে রাজধানীর উত্তরা, খিলখেত, বনানী, গুলশান, কালাচাঁদপুর, শাহজাদপুর, বাড্ডা, রামপুরা এলাকা। এসব এলাকার গারো নারীরা নিরাপত্তার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন, টনি হাগিদক (০১৭১৮৭৫০০০০) ও চয়ন রেমার (০১৭২৩০০৭০৯১) সঙ্গে।
জোন বি’-তে রয়েছে মহাখালী, মিরপুর, ফার্মগেট, মনিপুরীপাড়া, তেজকুনীপাড়া, তেজতুরী বাজার, রাজাবাজার, গ্রীন রোড, কাঁঠালবাগান এলাকা। সংশ্লিষ্ট এলাকার নারীরা নিরাপত্তার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন বিপুল চিরান (০১৯৬২৪০০৬৫১) ও প্রলয় নকরেকের (০১৯২৪২১৩৫০২) সঙ্গে।
জিগাতলা, ধানমণ্ডি, সাত মসজিদ রোড, মোহাম্মদপুর, শুক্রাবাদ এলাকা পড়েছে জোন সি-তে। টুটুল চাম্বুগং (০১৯৮৯১৬০৮৪৫) ও শৈবাল রাংসা (০১৯১৮৫৭৩৭৬৫) এই জোনের নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করবেন।
সবশেষ জোন ডি-তে রয়েছে মতিঝিল, পল্টন, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, আজিমপুর, পুরান ঢাকা, লক্ষ্মীবাজার এলাকা। টনি চিরান (০১৬৮৫৭০৬৫৬৩) ও সানি সেবাস্টিনের (০১৭৮৮৬৮৭০২৬) সঙ্গে নিরাপত্তার প্রশ্নে যোগাযোগ করতে পারেন এই এলাকায় বাস করা গারো নারীরা।
এ ছাড়া একটি সমন্বয় সেল করা হয়েছে। এই সেলের দায়িত্বে রয়েছেন সোহাগ চাম্বুগং (০১৭১৭০৬৭৯৩৫), ডেনী দ্রং (০১৭১৬১৯৪৮৬১) ও বিপুল চিরান (০১৯৬২৪০০৬৫১)।