সংখ্যালঘুদের দাবি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মানতে হবে : কাজল দেবনাথ
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ বলেছেন, ‘১৯৫৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেওয়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সব দাবি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেনে নিতে হবে।’ গতকাল শুক্রবার (২৬ মে) বিকেল ৩টার দিকে নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজল দেবনাথ এ কথা বলেন।
কাজল দেবনাথ বলেন, ‘১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের ৩০৯টি সংসদীয় আসনের ৭২টি ছিল হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। যুক্তফ্রন্টের ওই নির্বাচনে ৭২টি আসনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারতেন। তখন জ্যেষ্ঠ নেতারা বসে সিদ্ধান্ত নিলেন ৭২টি আসন ছেড়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা মূল দলে যাব। তখন প্রথমবারের মতো মুসলিম লীগকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগকে জিতিয়ে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল। এরপর ১৯৭০ সালেও আমাদের শতভাগ ভোট আওয়ামী লীগকে দিয়েছিলাম। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে বঙ্গবন্ধুর বিজয় নিশ্চিত হয়েছিল। এ পর্যন্ত সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছি। তাই আমাদের সব দাবি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেনে নিতে হবে।’
ভাষা আন্দোলনের বিষয়ে কাজল দেবনাথ বলেন, ‘পাকিস্তানে প্রথম বাংলা ভাষার বিলটি সংসদে আনেন ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত। তাঁকে মাত্র তিনজন বাঙালি সমর্থন দিয়েছিলেন। আর সেই তিনজনই ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের।’
জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বিষয়ে সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, ‘আসল সর্বনাশ করেছিল জিয়াউর রহমান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী করে। এতে ৭২ সালের সংবিধানকে ইউটার্ন করে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এরপর এরশাদ রাষ্ট্রিয় ধর্ম ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। যে কারণে আজ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মতো সংগঠনের আবির্ভাব হয়েছে।’
কাজল দেবনাথ আরও বলেন, ‘দেশে যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠদের জন্য মডেল মসিজিদ নির্মাণ করা হয়েছে, তেমনি আমাদের জন্য মন্দির, প্যাগোডা ও গীর্জা নির্মাণ করতে হবে। কারণ সেগুলো নির্মাণে আমাদের দেওয়া ট্যাক্সের টাকাও রয়েছে। যারা দেশের টাকা লুট করে বেগমপাড়ায় যায়, মালয়েশিয়ায় যায়, লন্ডনে যায়; তারা আরাম আয়েশ করতে যায়। আর যারা ভারতে যায় তারা নির্যাতিত হয়ে যায়, জীবন বাঁচাবার জন্য যায়।’
সকাল ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও। মহানগর সভাপতি বীরেন্দ্র নাথ ঘোষের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন খুলনা সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র আলহাজ তালুকাদর আব্দুল খালেক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী, সংগঠনের সহসভাপতি বিজয় কুমার ঘোষ, সহসভাপতি ও সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ ও অ্যাডভোকেট তাপস পাল, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপ্না রাণী বিশ্বাস, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেমন্ত কৈরাশী, ভারত-বাংলাদেশ সম্প্রীতি পরিষদ খুলনা চ্যাপ্টারের চেয়ারপারসন বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এম এম মুজিবুর রহমান, জাতীয় মহিলা সংস্থা খুলনার চেয়ারম্যান অধ্যাপক রুনু ইকবাল বিথার, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্যামল হালদার, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণপদ দাস প্রমুখ।
এরপর খুলনা প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় অধিবেশনে একক প্রার্থী হওয়ায় পুনরায় বীরেন্দ্র নাথ ঘোষকে মহানগর কমিটির সভাপতি ও গোপাল চন্দ্র সাহাকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অপর দুই প্রার্থী থাকলেও তাদের সমর্থনে সঠিক প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারী না থাকায় পুনরায় বিমান বিহারী রায় অমিতকে সভাপতি ও অধ্যাপক ডা. শ্যামল দাসকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।