সুদের টাকার জন্য ছাত্রলীগনেতার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ
মাদারীপুরের ডাসারে সুদের টাকার জন্য উত্তম শীল (৪০) নামে এক সেলুন ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগনেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আজ শনিবার (১০ জুন) দুপুরে ডাসার থানায় ওই ছাত্রলীগনেতাসহ চার থেকে পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী অপু শীল। পরে, অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে থানা পুলিশ।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগনেতা সৈয়দ শাহনেওয়াজ লিংকন ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। আর আটককৃতরা হলেন—মোকলেস হোসেন (৩৬) ও শফিকুল (৩২)।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, উত্তম শীল ডাসার বায়তুল নূর মসজিদ মার্কেটে ব্যবসা করেন। কয়েক মাস আগে ১০ শতাংশ সুদে লিংকনের থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন তিনি। এরপর থেকে যথারীতি প্রতি মাসের ৫ তারিখের মধ্যে সুদের টাকা শোধ করে আসছিলেন। তবে, চলতি মাসে তিনি তা দিতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই সেলুন ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাতভর নির্যাতন করা হয়। পরে দোকানের চাবি রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এমনকি, দোকানের মালামাল বিক্রি করে টাকা নেওয়া হবে ও মামলা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।
পরে থানায় অভিযোগ দেন উত্তম শীলের স্ত্রী অপু শীল। তিনি জানান, তার স্বামী সুদের ওপর টাকা তুলেছিল। টাকার জন্য প্রায়শ তাদের বাড়িতে বিভিন্ন লোকজন আসত। শুক্রবার রাতে সুদের টাকার জন্য লিংকন ও আরও চার-পাঁচজন তাদের বাড়িতে এসে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়। অজ্ঞাতস্থানে আটকে রেখে তাকে রাতভর নির্যাতন করে।
এই গৃহবধূ আরও জানান, স্বামীর খোঁজে আজ সকালে তিনি লিংকনের বাড়িতে যান। সেখানে গেলে তাকে গালাগাল করেন অভিযুক্তরা। তার সামনেই স্বামীকে চরথাপ্পড় মারেন। টাকা দিতে না পারায় তারা দোকানের চাবি রেখে দেন। দোকানের সবকিছু বিক্রি করে টাকা আদায় ও মামলার হুমকি দেন।
অপু শীল বলেন, ‘সুদের টাকা পরিশোধ করতে করতে আজ আমরা নিঃস্ব। তারা সুদের যে হিসাব দিয়েছে তা কীভাবে পরিশোধ করব। আমার স্বামী যা ইনকাম করে বাড়িতেও কিছু দিতে পারে না। আমরা গরিব মানুষ। কোথায় যাব? আমদের মরণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। আমি সুদ ব্যবসায়ীদের বিচার চাই।’
বিষয়টি নিয়ে ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে দুজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরার প্রক্রিয়া রয়েছে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগনেতা সৈয়দ শাহনেওয়াজ লিংকনের মুঠোফোনে বারবার চেষ্টার পরও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। অভিযোগের খবরে তিনি পলাতক বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন অনিক বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনাটি আমার জানা নেই। যদি আমাদের দলের কেউ এতে জড়িত থাকে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’