জীবিত হওয়ার আশায় স্ত্রীর মরদেহের সঙ্গে ৬ দিন বসবাস!
স্ত্রী মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হবেন! এমন বিশ্বাস থেকে মরদেহ খাটের নিচে রেখে ছয় দিন ঘরে বসবাস করেছেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক ও তাঁর চার মেয়েসহ নাতি-নাতনি। নরসিংদীর মনোহরদী পৌরসভার বাজারের পাশে অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষকের পরিবারে এ ঘটনা ঘটে। তাঁরা আটরশির মুরিদ।
গতকাল শনিবার (১০ জুন) রাতে মরদেহের দুর্গন্ধ পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে খাটের নিচ থেকে অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় স্বামী, চার মেয়েসহ সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের আটক করা হয়। পরে চিকিৎসার জন্য সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মোক্তার উদ্দীন তালুকদার স্ত্রী শামীমা সুলতানা নাজমাকে (৫৫), চার মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ বাসায় থাকেন। তাঁরা আটরশি পীরের ভক্ত। বাসা থেকে খুব একটা বের হন না। প্রতিবেশীরা তাদের জিজ্ঞেস করলেও তেমন কোনো উত্তর দেন না। প্রতিদিন রাত ৩টা থেকে ভোর পর্যন্ত জিকির করেন।
জানা গেছে, মৃত্যুর আগে স্ত্রী নাজমা তাঁর স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের বলে গেছেন, যদি তিনি মারা যান তাহলে তাঁর মরদেহ ঘরে রেখে যেন অপেক্ষা করে। তিনি পুনরায় জীবিত হবেন। তাই গত ৫ জুন (সোমবার) তিনি মারা গেলে পরিবারের সদ্যসরা বিষয়টি কউকেই জানায়নি। তাঁরা সবাই তাঁর জীবিত হওয়ার আশায় মরদেহ খাটের নিচে রেখে দেন। এরই মধ্যে মরদেহে পচন ধরে। ধীরে ধীরে দূর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। দূর্গন্ধ তীব্র হলে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া দেননি। পরে ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে যায় পুলিশ। ওই সময় খাটের নিচে অর্ধ্বগলিত মরদেহসহ পরিবারের সবাইকে দেখতে পায় পুলিশ। পরে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের সদর হাসাপাতালে পাঠায়। আর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সবাইকে থানায় নিয়ে আসে। পরে তাঁদের মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
মনোহরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক খন্দকার আনিসুর রহমান বলেন, ‘থানা থেকে তাদের রাতেই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রেশার (রক্তচাপ) বেশি থাকায় তাদের চিকিৎসা দিয়েছি। তাদের শারীরিক অন্য কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।’
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন বলেন, ‘পরিবারটি এক পিরের মুরিদ। জিকির করতে করতে নাজমার মৃত্যু হয়েছে বলে তারা আমাদের জানিয়েছে। পুনরায় জীবিত হবে—এই ধারণায় তারা মরদেহ খাটের নিচে রেখে দিয়েছিল। আমরা নাজমার স্বামী, চার মেয়ে, তিন নাতি-নাতনিকে জিজ্ঞাসাবাদের পর হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এটি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক মৃত্যু তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে বলা যাবে।’