ইউপি চেয়ারম্যানকে অনাস্থা জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন সদস্যদের
টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। নাগরিক সুবিধা পেতেও গুনতে হয় বিভিন্ন অঙ্কের টাকা। এতে ক্ষুব্ধ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯৫ শতাংশ ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় জনগণ। সেই ধারাবাহিকতায় নরসিংদীর রায়পুরায় উত্তরবাখরনগর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই ইউপির নির্বাচিত সদস্যরা।
আজ সোমবার (১২ জুন) দুপুরে উপজেলার উত্তরবাখরনগর ইউনিয়নের বড়চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন করেন ইউপি সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে ওই ইউপির চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহর বিরুদ্ধে অনাস্থার ঘোষণা দেন ৯ সদস্য। একই সঙ্গে স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ডসহ জন্মসনদ নিবন্ধনে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির সুস্পষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেন তাঁরা। সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম এবং টিআর, কাবিখা, কাবিটা বরাদ্দে স্বজনপ্রীতির অভিযোগও করেন তাঁরা।
চেয়ারম্যানের এসব অনিয়মের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইউপি সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে সবার পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৫নং ওয়ার্ড সদস্য সোহাগ আহমেদ জীবন। তিনি বলেন, ‘উত্তরবাখরনগর ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত নারী সদস্যসহ মোট ১২ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ৯ সদস্য চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহর বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছি।
ইউপি চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহর অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা শঙ্কিত। শিশুদের স্কুলে ভর্তিতে নাগরিক সনদ প্রদানে জনপ্রতি ৫০০ টাকা, জন্ম সনদে বয়স বাড়ানো কমানোতে জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা, মৃত্যু সনদ নিতে এক হাজার ২০০ টাকা, জন্মসনদে ভুল সংশোধনে দেড় হাজার টাকাসহ অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে বিবাহের সহায়তা করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছেন। সরকারি সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিতে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা গুনতে হচ্ছে উত্তরবাখরনগর ইউনিয়ন পরিষদের বাসিন্দাদের। টাকা ছাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দারা কোনো কাজ করতে পারছে না। শুধু তাই নয়—বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ও মাতৃত্বকালীন ভাতা কার্ডের জন্য সরকারি অফিসের কর্মকতাদের নামে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। এই ইউনিয়নে গ্রাম আদালত আইন-২০০৬ এর ৫ ধারা লঙ্ঘন করে তার পছন্দের লোকদের দিয়ে অর্থের বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক ভাবে গ্রাম আদালতের বিচারকাজ করে থাকেন। সরকারি টিআর, কাবিখা, কাবিটা বরাদ্দে আংশিক কাজ দেখিয়ে বাকি টাকা লুটপাট করেছেন তিনি। চেয়ারম্যানের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে বাধা দিলে বা প্রতিবাদ জানালে ইউপি সদস্যদের চেয়ারম্যানের রোষানলে পড়তে হয়।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে ইউনিয়ন পরিষদে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিধান থাকলেও চেয়ারম্যান হাবিব উল্লাহ তা করেননি।
সংবাদ সম্মেলননে উপস্থিত ছিলেন ১নং ওয়ার্ডের মো. রানা মিয়া, ২নং ওয়ার্ডের শব্দর আলী ভুইয়া, ৩নং ওয়ার্ডের আসাদুল হক, ৫নং ওয়ার্ডের সোহাগ আহমেদ জীবন, ৬নং ওয়ার্ডের জলিল মিয়া, ৭নং ওয়ার্ডের রহমত আলী, ৮নং ওয়ার্ডের মো. শিশু মিয়া, ৯নং ওয়ার্ডের আবু চাঁদ এবং ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিতনারী সদস্য মনিরা আক্তার।