পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া জনতা ব্যাংকের সেই পিয়ন গ্রেপ্তার
প্রতারণা করে গ্রাহকদের বিপুল টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়া জনতা ব্যাংকের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর শাখার পিয়ন আওলাদ হোসেন রঞ্জুকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শাহজাদপুর থানায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহজাদপুর সার্কেল মো. কামরুজ্জামান।
এর আগে সোমবার (১০ জুলাই) ভোর ৬টার দিকে গোপালগঞ্জ সদরের পূর্ব মিয়াপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পরে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি স্বীকার করেছেন রঞ্জু। আওলাদ হোসেন রঞ্জু শাহজাদপুর পৌরসভার পাড়কোলা গ্রামের বাসিন্দা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘গত ৬ জুলাই জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখার আবু হানিফ নামে একজন গ্রাহক ওই ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উঠানোর জন্য আসেন। চেক জমা দেওয়ার পর তিনি জানতে পারেন, অ্যাকাউন্টে টাকা নেই। অথচ মে মাসের ২ তারিখে তিনি জনতা ব্যাংকে কর্মরত পিয়ন আওলাদ হোসেন রঞ্জুর মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলেন। পরে বিষয়টি ব্যাংকের ম্যানেজারকে জানান ভুক্তভোগী। ম্যানেজার জানতে পারেন আওলাদ হোসেন রঞ্জু ঈদের ছুটির পর থেকে ব্যাংকে অনুপস্থিত আছেন। এছাড়া ২ মে তারিখে হানিফের কোনো জমা ভাউচার নেই। রঞ্জুর অনুপস্থিতির বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাহকরা ব্যাংকে আসতে শুরু করেন। ওই ঘটনায় ম্যানেজার জেহাদুল ইসলাম শাহজাদপুর থানায় ৬ জুলাই একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (ডায়েরি নং ৩২৭)।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ‘পরবর্তীতে ম্যানেজার জানতে পারেন, আওলাদ হোসেন রঞ্জু দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যাবলীর অগোচরে ব্যাংকের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া ভাউচার তৈরি করে গ্রাহকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে ২৫ জন গ্রাহকের প্রায় ৪৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। পরে ম্যানেজার মো. জেহাদুল ইসলাম বাদী হয়ে সোমবার (১০ জুলাই) শাহজাদপুর থানায় একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২৩)। পরে শাহজাদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান ও শাহজাদপুর থানার ওসির তত্ত্বাবধানে উপপরিদর্শক (এসআই) গোপাল চন্দ্র মণ্ডলের নেতৃত্বে গোপালগঞ্জ থেকে আওলাদ হোসেন রঞ্জুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে নগদ ২৪ হাজার ২০ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে রঞ্জু ২০০৩ সালে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখাতে পিওন কাম পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে যোগদান করে। ২০০৭ সালে তিনি কাজের পাশাপাশি ডেচপাশের কাজ শুরু করে এবং ব্যাংকের প্রবেশ দ্বারে একটি ডেস্ক স্থাপন করে। সে তার কাজের পাশাপাশি যখন কেউ অ্যাকাউন্ট খুলতে আসত তখন তার ফরম পূরণ করে দিতেন। ২০১৬ সালের দিকে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। স্থানীয় লোকজনের কাছে চড়া সুদে আনুমানিক ১৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। ঋণের টাকা পরিশোধ করার জন্য টিএমএসএস, ব্র্যাক, আশা, দিশাসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা ঋন নেন। তাকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৩০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হত। এরপর ২০২২ সালের শুরুর দিকে গ্রাহকদের কাছ থেকে জালিয়াতি করে টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করেন।’
মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচিত লোকদের টার্গেট করে এবং তাদের অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়। তার গ্রাহকরা তাকে বিশ্বাস করতেন এবং তার পরিচিত টার্গেট অ্যাকাউন্টের কেউ টাকা জমা ও উত্তোলন করতে এলে তার মাধ্যমেই করতেন। কোনো গ্রাহক টাকা তুলতে এলে তারা যে টাকার পরিমাণ লিখত তার বাম পাশে গোপনে রঞ্জু একটি ডিজিট বসিয়ে বেশি টাকা তুলতেন। প্রায় সময় চেক নিজের কাছে রেখে তার কাছে থাকা টাকা দিয়ে দিতেন। পরে সুবিধামতো সময়ে চেক দিয়ে বেশি টাকা উত্তোলন করতেন। এ ছাড়া, পরিচিত কেউ যখন টাকা জমা দিতে আসত তখন তার কাছে টাকা দিয়ে চলে যেত। কিন্তু তিনি টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজের কাছে রাখতেন এবং পরের দিন গ্রাহককে ভুয়া জমা রশিদ প্রদান করতেন। আমরা অল্প সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ পেয়েছি। এরপরও তদন্ত করে দেখছি তার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছেন কি না। এছাড়াও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করছে। তারাও জানার চেষ্টা করছে এ ঘটনায় আর কেউ জরিত আছেন কি না।’
জনতা ব্যাংকের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর শাখার পিয়ন আওলাদ হোসেন রঞ্জু গ্রাহকদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দাবি করেন প্রাথমিকভাবে ২২ লাখ টাকার মতো তিনি আত্মসাত করেছেন বলে তারা জানতে পেরেছিলেন।