গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয় দাবি করায় প্রসূতিকে খুন
রংপুরের পীরগঞ্জে গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচায় দাবি করায় পরিকল্পিতভাবে এক প্রসূতিকে এবং তার ভূমিষ্ঠ হওয়া নবজাতক কন্যাকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার মূলহোতা মাসুদ মিয়াকে (৩৫) সোমবার (১৭ জুলাই) দিনগত রাতে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, আশুলিয়ার একটি গার্মেন্টসে পরিচয় হয় ভুক্তভোগী নারী ও মাসুদ মিয়ার। বিয়ের আশ্বাসে ওই নারীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে মাসুদ। একপর্যায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন ওই নারী। গর্ভে থাকা সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে রংপুরের পীরগঞ্জে মাসুদ মিয়ার বাসায় গেলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় ওই নারীকে।
আজ মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকালে রাজধানী কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
খন্দকার আল মইন বলেন, গত ১৫ জুলাই রংপুরের পীরগঞ্জ থানাধীন খালাশপীর এলাকায় আখক্ষেতের ভেতর থেকে অজ্ঞাতনামা (৩০) নারী ও সদ্যপ্রসূত নাবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই ঘটনায় পীরগঞ্জ থানার পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা ও মরদেহ গুমের মামলা হয়। নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব গোয়েন্দা নজদারি বৃদ্ধি করে।
আল মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার রাতে গাজীপুরের গাছা থানাধীন তারগাছ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওই হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা ও প্রধান আসামি মাসুদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মাসুদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার ও সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ১০ বছর ধরে আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন মাসুদ। ২০২২ সালের ফ্রেরুয়ারিতে ওই গার্মেন্টসে সান্ত্বনা নামের ওই ভুক্তভোগী নারী চাকরিতে যোগ দেয়। একই কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে ভিকটিমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, গ্রেপ্তার মাসুদের দেওয়া তথ্যমতে ভিকটিম সান্ত্বনা ছিলেন তালাকপ্রাপ্তা। গ্রেপ্তার মাসুদ ও ভিকটিমের প্রেমের সম্পর্ক গভীর হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আশুলিয়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে তারা। একপর্যায়ে ভিকটিম অন্তঃসত্ত্বা হয়। ভিকটিম সান্ত্বনা মাসুদকে প্রতিনিয়ত বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তাদের মাঝে ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার মাসুদ তার বাড়িতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে ভিকটিম সান্ত্বনাকে ঢাকায় রেখে কিছুদিনের জন্য তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জে চলে যায়। তবে মাসুদ নিজের বিয়ের বিষয়টি সান্ত্বনাকে জানাননি।
কমান্ডার আল মঈন বলেন, গত ১২ জুলাই সান্ত্বনা গ্রেপ্তার মাসুদের গ্রামের বাড়ি রংপুরে যায়। সেখানে গিয়ে সান্ত্বনা জানতে পারে মাসুদ বিবাহিত ও তার ছেলে আছে। সেখানে সান্ত্বনা তার গর্ভজাত সন্তানের স্বীকৃতি এবং তাকে বিয়ে করার জন্য মাসুদকে চাপ প্রয়োগ করে। তখন মাসুদের প্রথম স্ত্রী ফরিদা তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। একপর্যায়ে মাসুদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সান্ত্বনাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে ঢাকায় গিয়ে ঘরভাড়া নিয়ে পূর্বের ন্যায় বসবাস শুরু করবে বলে আশ্বস্ত করে। পরবর্তীতে গত ১৩ জুলাই মাসুদের খালা সান্ত্বনাকে রংপুরের পীরগঞ্জ হতে ঢাকার উদ্দেশে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। একপর্যায়ে মাসুদ সান্ত্বনার সঙ্গে মোবাইলফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে গাড়ি থেকে নেমে তার বাড়িতে ফেরত আসার জন্য বলেন।
কামান্ডার আল মঈন বলেন, পরে সান্ত্বনা গাড়ি থেকে নেমে বাসস্ট্যান্ড থেকে মাসুদের সঙ্গে তার বাড়িতে যাওয়ার পথে খালাশপীর এলাকার একটি বড় আখক্ষেতের কাছে পৌঁছে। এ সময় মাসুদ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য আখক্ষেতে যায় ও কৌশলে সান্ত্বনাকেও আখ খেতে নিয়ে যায়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সান্ত্বনাকে হত্যার উদ্দেশে তার পেছন থেকে ওড়না দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে এবং গলায় ও পেটে পা দিয়ে আঘাত করে। ফলে ভিকটিম সান্ত্বনার গর্ভজাত সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় এবং উভয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামি মাসুদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র্যাব কর্মকর্তা।