রংপুরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী, নৌকার আদলে তৈরি মঞ্চ
আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে যোগ দিতে বুধবার (২ আগস্ট) রংপুরে আসছেন দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এই সফর ঘিরে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এখানে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা অবস্থান করবেন তিনি।
এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সফরসূচি প্রকাশ করেছেন তাঁর একান্ত সহকারী সচিব ইসমাত মাহমুদা।
সফরসূচি থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী দুপুর সাড়ে ১২টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারযোগে রংপুরের উদ্দেশে রওনা হবেন। তাঁকে বহন করা হেলিকপ্টার দুপুর ২টায় রংপুর ক্যান্টনমেন্ট হেলিপ্যাডে অবতরণ করবে। পরে ২টা ৫ মিনিটে সেখান থেকে সড়ক পথে সার্কিট হাউসে আসবেন। ২টা ১৫ মিনিটে সেখানে পৌঁছে তিনি মিলনায়তনে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর বেলা ৩টার দিকে রংপুর জিলা স্কুল মাঠের জনসভায় যোগ দেবেন তিনি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাঁচ মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ঘিরে বড় ধরনের শো-ডাউনের টার্গেট নিয়ে বিভাগের আট জেলায় দুই সপ্তাহ ধরে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে। বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা এখন অবস্থান করছেন রংপুরে।
মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, রংপুরের সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে। এদিকে রংপুরের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে মহানগরীকে সাজানো হয়েছে নানান সাজে। রঙিন ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড, শত শত তোরণ, প্লাকার্ড নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তার দুই ধারে। চলছে ব্যাপক প্রচারণাও। স্থানীয় সাংস্কৃতিককর্মী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ১৯৫২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত গীতি আলেখ্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ডিসপ্লে করবে।
প্রধানমন্ত্রী এ মহাসমাবেশে রংপুর বিভাগের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। বিকেলে ফিরে যাবেন ঢাকায়।
সকাল থেকে জনসভাস্থলের সঙ্গে সংযুক্ত কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। বাইরের জেলা ও উপজেলা থেকে আসা বিভিন্ন যানবাহন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণ এবং যেসব রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলবে তার নির্দেশনা দিয়েছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি পূরণের আশায় বুক বেঁধেছে রংপুরবাসী। প্রধানমন্ত্রী এবার রংপুরে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সেইসঙ্গে নতুন প্রতিশ্রুতির ঘোষণাও আসতে পারে।
সভামঞ্চ নির্মাণ কাজসহ অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মাঠে নৌকার আদলে নির্মিত মঞ্চে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর রংপুরের মহাসমাবেশ ঘিরে এখন একাট্টা ও উজ্জীবিত রংপুর বিভাগীয় আওয়ামী লীগ। এই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করে বিরোধী জোটের মাঠের আন্দোলন মোকাবিলা এবং রংপুর বিভাগকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে রূপান্তরের স্বপ্ন নেতাকর্মীদের। মহাসমাবেশ কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলেও আশা করছেন তাঁরা। সর্বশেষ ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাজোটের জনসভায় উন্নয়নের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে দুটি নির্বাচনি জনসভা করলেও রংপুর মহানগরে আসেননি।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ কে এম ছায়াদত হোসেন বকুল বলেন, মহাসমাবেশে ১০ লাখের বেশি মানুষের সমাগমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ বিভাগের ৫৮টি উপজেলার প্রতিটি উপজেলা থেকে কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার মানুষ আনার প্রস্তুতি রয়েছে। জনসভা সফল করতে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় বর্ধিত সভাও করা হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা ছাড়াও সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা এই সমাবেশ সফল করতে বিভিন্নভাবে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এক যুগ পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মধ্যে আসছেন। নিশ্চয়ই উনি এখানে উন্নয়নমূলক কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন। আমরা সেই অপেক্ষায় আছি। প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে মঙ্গাপীড়িত এই অঞ্চলে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এক যুগ পর প্রধানমন্ত্রীর আগমনে উত্তরবঙ্গের জনপদ আজ উৎফুল্ল ও আনন্দিত এমন দাবি এ নেতার।