মামলার জন্য কৃত্রিম জখম, স্বাস্থ্য সহকারী গ্রেপ্তার
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক স্বাস্থ্য সহকারীর বিরুদ্ধে কৃত্রিম জখম সৃষ্টি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। অভিনব কায়দায় প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিতে এ কৃত্রিম জখম সৃষ্টি করে দেওয়া হয়। ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সুদর্শন কুমার রায় আজ শুক্রবার (৪ আগস্ট) বিকেলে স্বাস্থ্য সহকারীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হারবাল অ্যাসিস্টেন্ট (গার্ডেনার) পদে কর্মরত রাধা গোবিন্দ পাল অর্থের বিনিময়ে জখম সৃষ্টির ব্যবসা করে আসছেন বেশ কিছু দিন ধরে। এই কাজটি করে থাকেন ভানুগাছ বাজারে তাঁর ব্যক্তিগত মালিকানাধীন লাকী ফার্মেসির ভেতর। একেকটি জখম সৃষ্টি করতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন তিনি। জখম সৃষ্টির আগে রাধা গোবিন্দ পাল অ্যানেসথেসিয়া ইনজেকশন প্রয়োগ করে ব্লেড দ্বারা কেটে কাজটি করেন। পরে ওই যখমের রক্ত মুছে কাপড় দ্বারা বেঁধে কমলগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। তারই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী কথিত আহত ব্যক্তির জখম স্থানে সেলাইয়ের ব্যবস্থা করেন। পরবর্তী সময়ে আদালত কিংবা থানায় গিয়ে মিথ্যা ও কাল্পনিক ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এমন অসংখ্য ঘটনা রাধা গোবিন্দ পালের বিরুদ্ধে রয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বিলেরপাড় এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আমির আলীর ছেলে মো. লিয়াকত আলী জানান, একই এলাকার মকজ্জিল আলী গত ৭ মে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মিথ্যা সিআর মামলা করেন। একই আদালতে গত ৪ জুলাই কমলা বেগম বাদী হয়ে পৃথক আরও একটি মামলা করেন। অপরদিকে লিয়াকত আলীর এক আত্মীয় মো. রোমান মিয়াসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে হেলাল আহমদ বাদী হয়ে গত ৯ এপ্রিল একটি মিথ্যা মামলা করেন।
কমলা বেগমের মামলায় মো. লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি রয়েছে এবং মকজ্জিল আলীর মিথ্যা মামলায় ১৪ দিন কারাভোগ করে জামিনে বের হন। ওই তিনটি মামলা করতে প্রয়োজনীয় জখম তৈরি করে দেন স্বাস্থ্য সহকারী রাধা গোবিন্দ পাল। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের আরও অপরাধ করার অভিযোগ এলাকায় রয়েছে।
লিয়াকত আলী আরও জানান, কৃত্রিম জখম সৃষ্টিকারীরা কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়ে ওই হাসপাতালের ভূয়া কাগজ দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করলে আদালতের নির্দেশে মামলাগুলো এফআইআর হয়। মো. লিয়াকত আলী আদালতে জামিনের প্রার্থনা করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠান। পরবর্তী তারিখে লিয়াকত জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর রাধা গোবিন্দ পালের অভিনব প্রতারণার রহস্য খুঁজে বের করতে তার ভাবি রোকসানা আক্তারকে ড্যামি সাজিয়ে ফার্মেসিতে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে জখম তৈরি করে দিতে আলোচনা করলে রাধা গোবিন্দ রাজি হন। বিষয়টি আগেভাগেই কমলগঞ্জ থানা পুলিশকে তিনি অবহিত করেন।
গত ২৪ জুলাই রাত অনুমান সাড়ে ১০টার দিকে রোকশানা বেগমকে রাধা গোবিন্দ পাল জখম সৃষ্টির প্রস্তুতি নিলে নিলে তাঁর আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজন এসে তাঁকে আটক করেন। পরে খবর পেলে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে জখম তৈরির আলামতসহ তাঁকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে মো. লিয়াকত আলী বাদী হয়ে কমলগঞ্জ থানায় ওই দিন রাতেই জখম সৃষ্টিকারী রাধা গোবিন্দ পালকে আসামি করে মামলা করেন।
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযুক্ত কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারীর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) সুদর্শন কুমার রায় জানান, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কৃত্রিম জখম সৃষ্টিকারী রাধা গোবিন্দ পালকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে কৃত্রিম জখম তৈরির কয়েকটি অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি অধিক তদন্তের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁর কাছ থেকে অনেক তথ্য বের হয়ে আসবে।