নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিচয় মিলেছে
সিলেটে ঘুরতে যাওয়ার সময় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত পোশাক কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয় মিলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দিনগত রাত ৩টায় নরসিংদীর শিবপুরে ঘাসিরদিয়া নামক স্থানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পাথর বোঝাই ট্রাক তাঁদের বহন করা মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন নিহত হন, পরে হাসপাতালে দুজনের মৃত্যু। এ সময় গুরুতর আহত আরও চারজনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
খবর পেয়ে আজ নিহতদের স্বজনরা হাসপাতালে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা।
নিহতরা হলেন- টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার মীর কুমুল্লী এলাকার মোতাহের হোসেনের ছেলে মীর নাজমুল হক সবুজ, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে আল আমিন খান, ঝালকাঠির পারগোপালপুর গ্রামের আবদুল গনি হাওলাদারের ছেলে আল আমিন, জামালপুরের সরিষাবাড়ির ধারাবর্ষা গ্রামের দুদু মিয়ার ছেলে রাজু আহমেদ, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উত্তর কৃষ্ণনগর গ্রামের তোফায়েল হাওলাদারের ছেলে আবদুল আওয়াল, বরিশালের মুলাদীর মো. মজিবর সিকদারের ছেলে রায়হান শিকদার ওরফে আরিয়ান (২৪) ও মাইক্রোবাসের চালক নাসির।
আহতরা হলেন- সাকিব আহমেদ (২৮), পারভেজ (২৯), দোয়েল (২২) ও মিথুন (৩৫)। হতাহতরা সবাই সাভারের ইপিজেড এলাকার এসবি নিটিং লিমিটেডের কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁরা একটি ভাড়া করা হাইয়েস মাইক্রোবাসে করে সিলেটে ভ্রমণের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন।
পুলিশ জানায়, সাভার ইপিজেড এলাকা থেকে রাত ৯টার দিকে একটি পোশাক কারখানার মার্চেন্টাইজারসহ ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী ভ্রমণের জন্য সিলেট যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহনকারী হাইয়েস মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঘাসিরদিয়া নামক স্থানে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ঢাকাগামী একটি পাথর বোঝাই ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে দুমড়ে-মুচড়ে যায় মাইক্রোবাসটি। পরে স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গাড়ির দরজা কেটে আহত ছয়জনকে উদ্ধার করে। ওই সময় ঘটনাস্থলেই পাঁচ যাত্রী মারা যান। আহতদের নরসিংদী সদর হাসপাতাল নেওয়ার পথে একজন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। গুরুতর আহত চারজনকে আশঙ্কাজন অবস্থায় ভোররাত ৪টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা খালেক মিয়া বলেন, ‘রাতে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে মহাসড়কে এসে দেখি ট্রাকটা একপাশে পড়ে আছে। আর মাইক্রোবাসটি সড়কেই উল্টে পড়ে আছে। রক্তাক্ত মানুষের কান্না-কাটির শব্দ ভেসে আসছিল। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
নিহত আল আমিনের ছোট ভাই আসিফ বলেন, ‘সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পরও ভাইয়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল। সিলেট ঘুরে শ্রীমঙ্গলে আমার বাসার আসার কথা ছিল। সকালে খবর পাই ভাই আর নেই। এখন মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি।’
সাভার ইপিজেড এলাকার এসবি নিটিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মীর শিহাব উদ্দিন জাকির বলেন, ‘কারখানার ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী সিলেটে ভ্রমণের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। তাঁরা নরসিংদীর ইটাখোলায় পৌঁছালে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন। গুরুতর আহত চারজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা নিহতদের মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছি।’
নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মো. তৌহিদুল আলম বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ছয় জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে একজন মৃত ছিল। হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই আরও একজন মারা যায়। বাকি চারজনকে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ভোর ৪টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।’
গাজীপুর অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাথমিক ভাবে দেখতে পেয়েছি ট্রাকটি নিজের লেনেই ছিল, আর মাইক্রোবাসটি অন্য একটি লেনে পড়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মাইক্রোবাসটি অন্য কোনো যানবাহনকে ওভারটেক করতে গিয়ে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন ও হাসপাতালে দুজন মারা যায়। আমরা ট্রাকটির চালককে আটক করেছি, তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর মহাসড়ক থেকে গাড়িগুলো সরিয়ে ফাঁড়িতে নিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে। আর দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে আমরা তদন্ত করছি।’
২০১১ সালে এই ঘাসিরদিয়ায় মাছ বোঝাই ট্রাকের সঙ্গে পুলিশের গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে বেলাবো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) পুলিশের ১০ কর্মকতা নিহত হয়েছিলেন। পরে এই একই স্থানে সড়াইল থানার ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হয়।