সংসদ সদস্যকে অপহরণ ও প্রতারণার অভিযোগে স্ত্রীর মামলা
নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলালকে (বীর প্রতীক) অপহরণ, তাঁর স্বাক্ষর জাল, নাম ভাঙিয়ে টাকা আদায় করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত বুধবার (২৩ আগস্ট) রাতে ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের স্ত্রী রওশন হোসেন বাদী হয়ে নয়জনের নাম উল্লেখ করে পূর্বধলা থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের ব্যক্তিগত সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী, গাড়িচালকসহ নয়জনের একটি চক্র তাঁকে নিজ বাসভবন থেকে অন্য স্থানে নিয়ে আটকে রাখে। এ সময় তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইল ও অন্যান্য জিনিসপত্র ব্যবহার করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রতারণা করে চাকরি দেওয়ার নামে লোকজনের কাছ থেকে দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এ সময়ে অর্থ আদায় এবং ভুয়া কাবিননামা তৈরি করে নাদিয়া আক্তার নামের এক মহিলাকে ভুয়া স্ত্রী সাজিয়ে তাঁর অর্থসম্পদ আদায় করার চেষ্টা করা হয়।
পরে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে গত ২৭ মার্চ (সোমবার) বিকেলে ওয়ারেসাত হোসেন বেলালকে ধানমণ্ডির এক বাসা থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে। ২৮ মার্চ (মঙ্গলবার) তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্ত্রী রওশন হোসেন মালয়েশিয়ায় নিয়ে যান। এরপর সুস্থ হয়ে গত ১১ আগস্ট দেশে ফিরেন তিনি।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয় নাদিয়া আক্তার (২৬) নামে এক কলেজছাত্রীকে। এ ছাড়া নাদিয়ার ছোট ভাই পূর্বধলা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাইফকে (২০) আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন পূর্বধলা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোলায়মান হোসেন, সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ (পিএস) হিসেবে পরিচিত উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আলম (৪২), উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহসভাপতি কামরুজ্জামান উজ্জ্বল (৪২), দুই কলেজ শিক্ষক নাদেরুজ্জামান স্বপন (৪২), রতন পাল (৩২), ছাত্রলীগকর্মী শাহ আলীম (৩২) ও সংসদ সদস্যের গাড়িচালক শফিকুল ইসলাম (৪৫)। তবে আসামিরা অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও হাস্যকর বলে দাবি করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল দীর্ঘ ২০ বছর ধরে পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে নানা রোগে আক্রান্ত থাকায় কারও সঙ্গে তেমন একটা কথাও বলেন না। এ ছাড়া স্মৃতিশক্তিও কমে গেছে তাঁর।
মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) রাতে সংসদ সদস্যের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার বৈরাটি কাজলা হতে আসামিরা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়ে তাঁর বাসভবনে না গিয়ে অন্যত্র আটকে রাখা হয়।
অভিযুক্তরা সংসদ সদস্যের স্ত্রীকে জানায়, তিনি বিদেশ চলে গেছেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী তাঁদের কথা বিশ্বাস না করে খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখেন। পরে অভিযুক্তরা তাঁর স্বাক্ষর জাল করে জাল তালাকনামার ফটোকপি স্ত্রী রওশন হোসেনের কাছে পাঠান।
তা ছাড়া সংসদ সদস্য ও তাঁর পরিবারের জনপ্রিয়তাকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষুণ্ণ করার জন্য অভিযুক্তরা জাল কাবিননামা ডাকযোগে বিভিন্ন দপ্তরে পাঠায়।
মামলার বিষয়ে অভিযুক্ত সংসদ সদস্যের এপিএস ফেরদৌস আলম বলেন, আমাকে ও কামরুজ্জামান উজ্জ্বলকে গত ১৪ মার্চ পূর্বধলায় কতিপয় সন্ত্রাসী মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে মারাত্মক আহত করে। এখনও আমি ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি আছি। এ ব্যাপারে আমি একটি মামলা করেছিলাম। সেই মামলাকে নস্যাৎ করার জন্য আবার নতুন অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
স্ত্রী রওশন হোসেন বলেন, ‘আমাদের পারিবারিক, রাজনৈতিকভাবে হেয় করা এবং অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য অভিযুক্তরা এহেন ঘৃণ্য কাজ করছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও নিউজ পোর্টালগুলো মূল তথ্য না জেনে যেন অপপ্রচারে লিপ্ত না হয় মিডিয়ার কাছে এ অনুরোধ জানান তিনি।
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলায় অপহরণ ও বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাল কাবিননামা ও জাল তালাকনামা তৈরির কথা বলা হয়েছে। মামলার বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।