টাকা ধার করে মরদেহ বাড়িতে নিলেন মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহতের স্বজনরা
‘খবর হুইনা একজনের কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা নিয়া ঢাকায় গেছিলাম। লাশ নিয়া বাড়ি আসার ভাড়াও ছিল না। একটা অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে মরদেহগুলো আনছি। বাড়িতে আইসা ধার কইর্যা ভাড়া দিছি। কেমনে কি হইলো কইতে পারি না। আমি তো সেখানে যাইয়া দেহি, আমার সোনার মানিকের মরদেহ পইড়া আছে,’ বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির সামনের সড়কে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত তিনজনের স্বজন নাসির হাওলাদার।
নাসির হাওলাদার নিহত মিজানের বাবা, মুক্তা বেগমের শ্বশুর ও লিমা আক্তারের দাদা। একসঙ্গে ছেলে, নাতনি ও পুত্রবধূর মৃত্যুর খবর শুনে বৃহস্পতিবার রাতেই টাকা ধার করে ঢাকায় রওনা করেন তিনি।
শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে এনটিভির এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় নাসির হাওলাদারের। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষ হয়। সব গুছাইয়া রওনা দিতে রাত ৯টা বাজে।’
এদিকে, শুক্রবার দিনগত রাত ৩টার দিকে মরদেহ নিয়ে বাড়িতে পৌঁছান নাসির হাওলাদার। মরদেহের সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে আসে আলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরা ছোট নাতি হোসাইনকেও। অসুস্থ এই শিশুর কান্না থামছে না বলে জানান তার দাদা।
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজ সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তির সামনের রাস্তায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান চারজন। এর মধ্যে একই পরিবারের তিনজন রয়েছে। তাদের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরপাশা গ্রামে। তবে, তারা সদর উপজেলার টিএন্ডটি রোড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।
নিহত মিজানের বাবা নাসির হাওলাদার জানান, তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মিজান মেজ। চার বছর ধরে ঢাকায় থাকেন তিনি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করে সংসার চালাতো। আজ শনিবার সকাল ৯টায় নামাজে জানাজা শেষে লাশ ঝালকাঠির সদর উপজেলার ভাসন্ডা ইউনিয়নের আগরপাশা গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ঝালকাঠি পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের টিএন্ডটি সড়কে নাসির হাওলাদারের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, লোকজনের ভিড়। মর্মান্তিক এই ঘটনার খবর পেয়ে অনেকেই সমবেদনা জানাতে আসছেন স্বজনহারাদের কাছে। বাড়িতে নিহত মিজানের মা নিরু বেগম ও বোন রয়েছেন। তিনজনের মৃত্যুর খবরের পর থেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তারা। কথাও বলতে পারছেন মিজানের মা।
ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, ‘আমি ঢাকায় আছি। লোক মারফত খবর শুনেছি। এসে নিহতদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে যতটুকো সম্ভব সহযোগিতা করব।’