পি কে হালদারকে কি ভারত থেকে ফেরত আনা যাবে?
অর্থ পাচারের মামলায় প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) ২২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তিনি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি। কিন্তু প্রশ্ন হলো পি কে হালদার যে অর্থ পাচার করেছেন, তা কি ফেরত আনা যাবে? আর পি কে হালদারকে কি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে ভারত?
আদালত পি কে হালদারকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের জন্য ১০ বছর এবং পাচারের অপরাধে ১২ বছর এই মোট ২২ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে কানাডায় ৮০ কোটি টাকা পাচার এবং ৪২৬ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তিনি এখন ভারতের কারাগারে আছেন। গত বছরের ১৪ মে ভারতের অশোকনগর থেকে তিনি আটক হন।
পি কে হালদারকে এক হাজার ৪৪ কোটি টাকা জরিমানা এবং তার প্রায় ৬৪ একর জমি, ১১টি গাড়ি এবং এক কোটি কোটি ৮৭ লাখ টাকা জব্দ করার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
এই মামলায় তার আত্মীয়-স্বজনসহ ১৩ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি দুদক এই মামলাটি দায়ের করে। পি কে হালদার অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থপাচারের মোট ৫২টি মামলার আসামি বলে জানা গেছে। তার মধ্যে এই একটি মামলার রায় হলো।
পি কে হালদারের বিরুদ্ধে শুরুতে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা পাচারের কথা বলা হলেও বিভিন্ন মামলার তদন্তে সেটা ১০ হাজার কোটি টাকা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চারটি নন-ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি এই টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ। কানাডা ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে তিনি এই অর্থ পাচার করেছেন। তিনি ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তাকে আটকাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরপর তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে দেশে এসে আত্মসমর্পণের আবেদন করেছিলেন উচ্চ আদালতে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তিনি দেশে ফেরেননি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন আছে। অর্থ ফেরত আনা কিছুটা জটিল হলেও অসম্ভব কোনো বিষয় নয়। আর এটা শুধু দুদকের একার কাজ নয়, এর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরসহ আরও অনেক সংস্থা জড়িত। এর আগে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার নজির আছে।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং আন্তর্জাতিক আইনের ব্যবহার করতে হবে বাংলাদেশকে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এ নিয়ে আইনি সহায়তা চুক্তি আছে।’
এদিকে ভারত থেকে পি কে হালদারকে ফেরত আনা সেই দেশের মামলা শেষ হওয়ার ওপর নির্ভর করছে বলে দুদক জানিয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। আর ইন্টারপোলের সহায়তার জন্যও পুলিশ সদর দপ্তরকে বলেছে দুদক। পি কে হালদার বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে ভারতেও বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পি কে হালদার ভারতেও অভিযুক্ত। সেখানে আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। ফলে এখানে জটিলতা আছে। তবে তার অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে এখনই প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।’
আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘পি কে হালদারকে বাংলাদেশ ফেরত আনতে চায় কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ তাকে এখানে ফেরত আনা হলে আরও অনেকের নাম প্রকাশ পাবে। তাই তারা তাকে ভারত থেকে ফেরত আনতে হয়তো দেবে না।’
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, ‘পি কে হালদারকে তো বাংলাদেশের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ভারতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি তো বাংলাদেশের টাকা পাচার করেছেন। তাকে ফেরত আনার আইন আছে। পারস্পরিক চুক্তি আছে। ভারতে দ্রুত আইনগত প্রক্রিয়া শেষ করে সদিচ্ছা থাকলে তাকে ফেরত আনা যায়।’