এ আর রহমানের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের রিমেক অনলাইন থেকে সরাতে নোটিশ
ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সব ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে অস্কারজয়ী সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটির রিমেক অপসারণ করতে সরকারকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
আজ রোববার (১৯ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী ও একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এ নোটিশ পাঠান ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
মানবাধিকার সংগঠন ল’ অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বায়েজীদ হোসাইন, নাঈম সরদার, ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদি জামান, ব্যারিস্টার শেখ মঈসুল করিম, ব্যারিস্টার আহমেদ ফারজাদ, অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট শাহেদ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট আনাস মিয়া ও অ্যাডভোকেট মো. বাহাউদ্দিন আল ইমরানের পক্ষে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
নোটিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইমসহ সব ধরনের ওটিটি ও ওয়েবসাইট থেকে এআর রহমানের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটি অপসারণ করতে বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়েছে, কবি কাজী নজরুল ইসলামের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ঐতিহাসিকভাবে সমৃদ্ধ ‘কারার ঐ লৌহ–কপাট’ গানটিতে অস্কারজয়ী ভারতীয় সংগীত পরিচালক এআর রহমান নতুনভাবে সুরারোপ করেছেন। এটি ব্যবহার করা হয়েছে পিপ্পা নামের একটি হিন্দি চলচ্চিত্রে। এআর রহমান গানের কথা ঠিক রাখলেও সুরের পরিবর্তন করেছেন। এই গান নজরুলের নিজের সুরারোপিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। আমাদের সব বিপ্লব–বিদ্রোহ তথা আন্দোলন–সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করেছে ‘কারার ঐ লৌহ–কপাট’।
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি বিদ্রোহী কবি নামেও পরিচিত। তার কবিতা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ। নোটিশে তার কবিতার আসল সুর অক্ষুণ্ন রাখার দাবি জানানো হয়।
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ শত বছরের এক অবিনাশী অমর গান। সময়ের প্রয়োজনে লেখা হলেও গানটির লোকপ্রিয়তায় সামান্য ঘাটতি হয়নি। ব্রিটিশবিরোধী মানসে লেখা গানটি সব ধরনের অন্যায়, অবিচার ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার, ফলে এখনো সমানভাবে এটি প্রাসঙ্গিক। একই গান একটি কাজী নজরুলের সুরে ও আরেকটি বিকৃত সুরে থাকলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিভ্রান্ত হবে।’
নোটিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ আর রহমানের রিমেক করা গানটি অপসারণ করা না হলে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থে রিট দায়ের করে নির্দেশনা চাওয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটির মূল লেখক, সুরকার ও গীতিকার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ব্রিটিশ সরকারের নির্দেশে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের আটকের প্রতিবাদে কাজী নজরুল ইসলাম ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানটি লেখেন। গানটি ‘ভাঙার গান’ বইয়ে প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। প্রকাশের পরপরই ১৯২৪ সালের ১১ নভেম্বর ভাঙার গান নিষিদ্ধ করে ব্রিটিশ সরকার।
পরবর্তী সময়ে স্বাধীন ভারতে ‘ভাঙার গান’ বইটি ফের প্রকাশিত হয়। ১৯৪৯ সালে কলাম্বিয়া রেকর্ড এবং ১৯৫০ সালে এইচএমভিতে গিরিন চক্রবর্তীর কণ্ঠে ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানটি বাণীবদ্ধ হয়। ১৯৪৯ সালে নির্মল চৌধুরী পরিচালিত ‘চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন’ সিনেমায় গিরিন চক্রবর্তী ও তার সহশিল্পীদের নিয়ে গানটি রেকর্ড করেন সংগীত পরিচালক কালীপদ সেন। এরপর ১৯৬৯-৭০ সালে জহির রায়হান তার কালজয়ী চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায়ও ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানটি ব্যবহার করেন।