দেশে ১১৩ জাতের ধান উদ্ভাবন : ব্রি
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) স্বাধীনতার পর থেকে ১১৩ জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ৬৩টি জাত উদ্ভাবন হয়েছে গত ১৪ বছরে। যার মাধ্যমে বর্তমানে দেশের প্রধান খাদ্যের ৯১ শতাংশ উৎপাদনে অবদান রাখছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
ব্রি কর্মকর্তাদের মতে, উদ্ভাবিত ৬৩টি জাতের মধ্যে ২৪টি লবণাক্ত সহনশীল, তিনটি খরা ও বন্যা সহিষ্ণু, দুটি জলোচ্ছ্বাস সহনশীলসহ বেশ কয়েকটি একই সঙ্গে এই ধরনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সহনশীল ধানের জাত রয়েছে। বেশ কয়েকটি জাত ‘বাসমতি’ ধরনের ‘প্রিমিয়াম গুণাবলী’ সম্পন্ন, অপুষ্টি, ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়া প্রতিরোধী জিঙ্ক রয়েছে বা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনুকূল উপাদান রয়েছে এমন। দেশে ২০০৯-২০১০ সালের আগে প্রতি হেক্টরে গড়ে তিন টনের কম ধান উৎপাদন হতো, যেখানে এখন তা প্রায় চার টনে পৌঁছেছে।
ব্রি’র মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহজাহান কবির বলেন, ‘গত ১৪ বছরে আমরা যেসব জাতের উদ্ভাবনের মাধ্যমে উৎপাদন শুরু করেছি তা বিভিন্ন পরিবেশ সহনশীল ও পরিবেশ বান্ধব এবং এগুলো দেশের মোট ধান উৎপাদনে বড় ধরনের অবদান রাখছে। সরকারের কৃষি-বান্ধব নীতি বিশেষ করে গবেষণার জন্য বর্ধিত বাজেট বরাদ্দের কারণে এই উন্নয়নে অবদান রাখা সম্ভব হয়েছে। যার ফলস্বরূপ ২০১০ সাল থেকে ধানের উৎপাদন ক্রমাগতভাবে বছরে প্রায় ছয় দশমিক ছয় টন বেশি হচ্ছে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত ব্রি-কে ধান নয় এমন বিভিন্ন ফসল প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের অবশিষ্টাংশ বা যৌথ প্রকল্পের অধীনে ইরি বা আইএফইআরআই-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রদত্ত অর্থ দিয়ে গবেষণার কাজ চালাতে হতো।’
ব্রি-এর উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান ড. খন্দকার মোহাম্মদ ইফতেখারুদ্দৌলা কবির বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই ব্রি ধান-৯৩ উৎপাদন শুরু করেছি, যা উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে প্রতি ইউনিট উৎপাদনের পরিমাণ চার টনেরও বেশি। আমরা আসন্ন বোরো মৌসুমে দুটি সংক্ষিপ্ত জীবন-চক্রের উচ্চ ফলনশীল জাতের মাধ্যমে উৎপাদন শুরু করার জন্য অপেক্ষা করছি। যার নাম দিয়েছি ব্রি ধান-৯৬ এবং ৮৮।’
ব্রি’-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইফতেখারুদ্দৌলা বলেন, ‘বাংলাদেশের ধান উৎপাদন ২০২১-২২ সালে চার কোটি টন ছাড়িয়েছে। যা দক্ষিণ এশিয়ায় ধানের ফলনের দিক থেকে দেশকে শীর্ষস্থানে নিয়ে গেছে এবং সারা বিশ্বে র্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।’
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশ ১৯৯৯ সালে ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তী বছরগুলিতে নীতিগত সমস্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফলন ধরে রাখা যায়নি এবং ২০১৩ সালে দেশ আবার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে।