জলবায়ু সংকটের বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানসহ অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণের দাবি বাংলাদেশের
বিশ্ব জলবায়ু সংকটের বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের পাশাপাশি অভিযোজন তহবিল দ্বিগুণ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বলছে, ‘বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপারে বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এ সময় দুর্বল অভিযোজন লক্ষ্যমাত্রার খসড়ার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে বৈশ্বিক জলবায়ু অভিযোজনের অর্থ দ্বিগুণ করারও দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ চাইছে, বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন হ্রাসে প্রধান নির্গমনকারী দেশগুলোর রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি। এক্ষেত্রে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে উন্নত দেশগুলোকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের পার্টি হেড প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ুবিষয়ক দূত সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে ফসিল ফুয়েলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। অনেক দেশ অনেক কথা বলছে। কিন্তু, বিজ্ঞান কী বলছে আমদের সেটাতে গুরুত্ব দিতে হবে। ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অবশ্যই বিজ্ঞানের ভিত্তিতে গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আলোচনার খসড়াগুলোতে সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সোমবার ও মঙ্গলবার দুদিন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই দিনে আশা করছি, আমরা এই সম্মেলন থেকে একটি গ্রহণযোগ্য ফল বের করে আনতে পারব।’
অভিযোজনের লক্ষ্যের দুর্বল খসড়া প্রসঙ্গে সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বৈশ্বিক অভিযোজন লক্ষ্যের যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তা আমরা পর্যালোচনা করছি। আশা করছি, সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে আমরা শেষ দুদিনে এই খসড়াকে শক্তিশালী করতে পারব।’
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা নতুন ও অতিরিক্ত সরকারি অর্থায়নে গুরুত্ব দেব। বাংলাদেশ দৃঢভাবে ন্যাপ বাস্তবায়নের জন্য দ্বিগুণ অভিযোজন তহবিল চাই। আমরা জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের জন্য সময়সীমাবদ্ধ বাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্যগুলোর ওপর জোর দিয়ে অভিযোজন সংক্রান্ত গ্লোবাল গোলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উন্মুখ।’
ক্ষয়ক্ষতির অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয়ে পরিবেশ সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘এই তহবিল থেকে অর্থ নিতে বাংলাদেশ পুরোপুরি প্রস্তত। এ ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।’
আজ মঙ্গলবার শেষ হচ্ছে বহুল আলোচিত দুবাই জলবায়ু সম্মেলন। উদ্বোধনের দিনেই ক্ষয়ক্ষতি তহবিলকে কার্যকর করার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যদিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করা দুবাই জলবায়ু সম্মেলন শেষ দিনে চূড়ান্ত চুক্তিতে বিশ্ববাসীকে কী উপহার দেবে সেটা দেখার অপেক্ষায় অধীর বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো।
দুবাই জলবায়ু আলোচনা সোমবার চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। সেই সঙ্গে আলোচনার ক্ষেত্রও ছোট হয়ে এসেছে। এখন কেবলমাত্র দুটি ইস্যু সামনে আছে। একটি হচ্ছে, জলবায়ু প্রশমনে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমন কমানোর উচ্চাভিলাসী লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে–জলবায়ু সংকট উত্তরণে দেশগুলোর সদিচ্ছা প্রকাশ।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘ জলবায়ু সংস্থার প্রধান সাইমন স্টিয়েল সোমবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুবাইয়ে একটি অর্থবহ চুক্তিতে উপনীত হতে হলে আমাদের বাধা সৃষ্টির মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। বৈশ্বিক মূল্যায়ন (গ্লোবাল স্টকটেক) অনুমোদনে সব দেশের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখানে হারজিতের কিছু নেই। আমি জিতব, আপনি হারবেন- এই মানসিকতা পরিত্যাগ করতে হবে। এখানে একজনের পরাজয় মানে সবার ব্যর্থতা, যা বিশ্বের ৮০০ কোটি মানুষকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবে। তাই আলোচনার টেবিলে প্রত্যেককে মঙ্গলের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সব দেশের লক্ষ্য হতে হবে বিশ্বের সব মানুষের মঙ্গলের জন্য চূড়ান্ত চুক্তিতে উপনীত হওয়া।’
দুবাইয়ে গত ৩০ নভেম্বর থেকে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ (কপ-২৮) শুরু হয়েছে। এটি চলবে আজ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত। ১৩ দিনব্যাপী এই সম্মেলনে ১৯৮টি দেশের সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।