মির্জা ফখরুল গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের লড়াই করছেন : আইনজীবী
হাতে লাঠি ভর দিয়ে এজলাসে আসেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাবার পাশে বসে ছিলেন মেয়ে। শুরু হয় শুনানি। এ সময় তার আইনজীবী বলেন, মির্জা ফখরুল গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের লড়াই করছেন। পরে নাকচ হয় রিমান্ড, নামঞ্জুর হয় জামিন। তবে, পল্টন থানার নাশকতার মামলায় জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন আদালত। আজ সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী এই আদেশ দেন। একই মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীরও রিমান্ড নাকচ করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
এদিন দুপুর ১ টা ১০ মিনিটে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের গারদ খানায় তাদের হাজির করা হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমীর খসরুকে দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ঢাকার সিএমএম আদালতের পাঁচ তলার এজলাসে তোলা হয়। এ সময় মির্জা ফখরুল হাতে লাঠি ভর দিয়ে এজলাসে আসেন। বিচারক আসন গ্রহণ করলে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মামলার নম্বর ধরে ডাকেন। এ সময় বিচারক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। তারপর বিচারক মামলার রিমান্ড শুনানির জন্যে আইনজীবীদের বলেন।
রিমান্ড শুনানির প্রথমে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান আদালতে বলেন, ‘মাননীয় আদালত তিনি (মির্জা ফখরুল) যদি কম্প্রোমাইজ করতেন, তাহলে ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আদালতে এখানে তাকে আসতে হতো না। তিনি রিকশাওয়ালা, দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষের গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের লড়াই করছেন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি সরকারের এক মন্ত্রী বলেছেন, তারা যদি নির্বাচনে যেতেন তাহলে এক রাতে সবাই ছাড়া পেতেন। আইন আজ কোথায় গেছে? তারা রাজি নয় বলেই এই রিমান্ডে নেওয়া। তারা রাজনৈতিক মিথ্যা মামলার আসামি। তারা রাজবন্দি।’
আইনজীবী আরও বলেন, ‘মহাসমাবেশের দিন জনগণ তাদের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য স্লোগান দিয়েছে। এটা কি তাদের অপরাধ? পুলিশ যে কারণে রিমান্ড চেয়েছে, তা রিমান্ড পাওয়ার যোগ্য নয়। এই রিমান্ড বাতিল করে তাদের জামিন দেন।’
এই আইনজীবীর শুনানি শেষে বিএনপিপন্থী আইনজীবী মহসিন মিয়া রিমান্ড বাতিলের শুনানিতে বলেন, ‘আসামিরা অসুস্থ। এখন কেন তাদের রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। এটা মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশমূলক। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বীর মুক্তিযোদ্ধা। এ মামলায় অসুস্থ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বিবেচনায় তাদের জামিন দেন।’
শুনানি শেষে বিচারক মির্জা ফখরুল ও আমির খসরুর রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন। তবে, আসামিদের দুদিন জেলগেটে জিঙ্গাসাবাদের আদেশ দেন।
এর আগে মির্জা ফখরুল ও আমির খসরুকে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে তাদের ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়েছে। এদিকে গত ১৪ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পল্টন মডেল থানার উপপরিদর্শক সুমিত কুমার সাহা তাদের গ্রেপ্তারের আবেদনসহ ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। আদালত তাদের রিমান্ড না দিলেও গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করেন, এজাহারনামীয় ও তাদের সহযোগী আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বেআইনি জনতাবদ্ধে দাঙ্গা হাঙ্গামা করতে বাঁশের লাঠি নিয়ে সজ্জিত হয়ে পুলিশকে আক্রমণ, বলপ্রয়োগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গুরুতর জখম করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ ব্যক্তি ও সম্পত্তির ক্ষতি সাধন করেন। উল্লেখিত আসামিরা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা। তারা ঘটনার দিন নাশকতা ও অরাজক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রকাশ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে এজাহারনামীয় ও পলাতক আসামিরা পল্টন মডেল থানার সামনে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ এবং ককটেল বিস্ফোরণ করে পুলিশ সদস্যদের গুরুতর আহত করেন। এতে আরও বলা হয়েছে, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে উল্লেখিত দুই আসামিকে (মির্জা ফখরুল ও আমীর খসরু) এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো-পূর্বক রহস্য উদঘাটন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার, ককটেল নিক্ষেপকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করতে জিজ্ঞাসাবাদ এবং অভিযান পরিচালনার জন্য ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
এর আগে মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনায় গত ২৯ অক্টোবর গ্রেপ্তার দেখিয়ে মির্জা ফখরুলকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ২ নভেম্বর মির্জা ফখরুলের জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। তবে, নিম্ন আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করলে গত ৫ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে মির্জা ফখরুলের জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়।
পরে ৭ ডিসেম্বর ফখরুলকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. সেলিম ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন। রাষ্ট্রপক্ষকে এক সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।