নিহত বিজিবি সদস্যের বিষয়ে যা বলছে বিএসএফ
ভারতের বনগাঁ সীমান্তে বিএসএএফের গুলিতে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) সদস্যের মৃত্যুর বিষয়ে বিএসএফ জানিয়েছে, বিজিবির ওই সদস্যের মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় হাসপাতালে। তার পরনে ইউনিফর্ম ছিল না। সঙ্গে পরিচয়পত্রও ছিল না।
গত ২৩ জানুয়ারি বিজিবির যশোর ব্যাটালিয়নের লেফটন্যান্ট কর্নেল আহমেদ জামিল চৌধুরী একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন। সেখানে বলা হয়েছে, যশোর অঞ্চলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের ছোঁড়া গুলিতে বিজিবির এক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ঠিক কীভাবে এই ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য ওই বিবৃতিতে ছিল না।
এ বিষয়ে বিএসএফকে প্রশ্ন করেছিল ডয়েচে ভেলে। বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের মুখপাত্র ডিআইজি এ কে আর্য বলেন, ‘২২ জানুয়ারি রাতে বনগাঁ সীমান্তে বিএসএফের এক জওয়ান একটি গরুপাচারকারী দলকে চিহ্নিত করে। বিএসএফের জওয়ান ওই পাচারকারীদের ধাওয়া করলে তারা পাল্টা আক্রমণ চালায়। প্রাণ বাঁচাতে বিএসএফের জওয়ান একটি গুলি চালায়। তাতে এক পাচারকারী আহত হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়।’
বিএসএফ মুখপাত্রের দাবি, ‘পাচারকারী দলটি ভারতের সীমান্তের ভেতর প্রায় ১০০ মিটার ঢুকে এসেছিল। পালানোর সময় সীমান্ত থেকে ৫০ মিটার দূরে বিএসএফের জওয়ান গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই পড়ে যান। এরপর বিএসএফের বাকি দল এসে ওই ব্যক্তিকে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।’
বিএসএফ মুখপাত্রের দাবি, ‘ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর তারা বিজিবির তরফে একটি ফোনকল পান। বিজিবি দাবি করে আহত ব্যক্তি তাদের জওয়ান। কিন্তু আহত ব্যক্তির কাছে কোনো পরিচয়পত্র ছিল না। বিজিবির কাছ থেকেই বিএসএফ জানতে পারে, বিএসএফ যাকে গরুপাচারকারী ভেবেছিল তিনি আসলে বিজিবির জওয়ান। বুধবার সকাল ৯টার দিকে ওই জওয়ানের দেহ বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছে মাসুম মানবাধিকার সংগঠন। সংগঠনের প্রধান কিরীটী রায় বলেন, ‘আমরা শুনেছি বিজিবির ওই জওয়ান ডিউটিতে ছিলেন না। চেক পোস্টেই তিনি ঘুমোচ্ছিলেন। সে কারণে তার পরনে ইউনিফর্ম ছিল না। গুলির আওয়াজ পেয়ে ঘটনাস্থলের দিকে তিনি দৌড়ে যান। তখনই তার পেটে গুলি লাগে।’
বিএসএএফের মুখপাত্র অবশ্য এই বক্তব্যের ওপর কোনো মন্তব্য করতে চাননি। বিএসএফকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন ওখানে গুলি চালানো হয়েছিল? বিএসএফের জবাব, ‘পাচারকারীরা প্রথম আক্রমণ করে। বিএসএএফের যেহেতু একজনই জওয়ান ছিলেন, তাই আত্মরক্ষা করতে তিনি গুলি চালাতে বাধ্য হন। যে জওয়ান গুলি চালিয়েছে, বিএসএএফের হাইকম্যান্ড ইতোমধ্যেই তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছে।’
কিরীটীর বক্তব্য, সীমান্তে গুলি চালানোর ঘটনা নতুন নয়। বনগাঁ সীমান্তে শুটিয়া অঞ্চলে এর আগেও গুলি চলার ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যুও হয়েছে। শুধু বাংলাদেশি নয়, ভারতীয়দেরও মৃত্যু হয়েছে ওই অঞ্চলে। বস্তুত, রাতের দিকে ওই অঞ্চলে অনেকেই মাছ ধরতে যান। সে সময়ও বিএসএফ গুলি চালায় বলে অভিযোগ। যদিও বিএসএফ এই অভিযোগ মানতে নারাজ।
বিএসএফের পাল্টা প্রশ্ন, বিজিবির ওই জওয়ান কেন ইউনিফর্ম ছাড়া, পরিচয়পত্র ছাড়া গরুপাচারকারী দলের সঙ্গে ছিলেন? অন্যদিকে, কিরীটীর বক্তব্য, গরুপাচারকারীদের একটি দল ভারতের দিকেও ছিল। বাংলাদেশের দিক থেকে যে দলটি সীমান্ত পার করে আসছিল তারা ভারতের ওই দলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিল। তাদের কাছে যে খবর আছে, তাতে ওই সময় বিজিবির জওয়ান সেখানে ছিলেন না। তিনি পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বিএসএফের অবশ্য দাবি, নিহত ব্যক্তি প্রথম থেকেই গরু পাচারকারী দলের সঙ্গে ছিলেন।