জাতীয় পতাকার অবমাননাসহ যুদ্ধাপরাধীকে সম্মাননা, প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে জাতীয় পতাকার অবমাননা ও যুদ্ধাপরাধীকে সম্মানানা দেওয়ার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে সাংবাদিকরা মানববন্ধন এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। আজ রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর মধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের এই স্মারকলিপি পেয়েছেন এবং নিয়মমতো তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী।
এই স্মারকলিপি পৃথকভাবে মন্ত্রী পরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারের বরাবরেও দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচিতে ময়মনসিংহ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলায় কর্মরত সম্পাদক ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী অবস্থান নিয়ে ময়মনসিংহে কর্মরত বিক্ষুব্ধ সাংবাদিকরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন পালন করেন। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিটি দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক ময়মনসিংহ প্রেক্লাবের সভাপতি।
স্মারকলিপিতে দাবি করা হয়, ২০২০ সালে ৭ নভেম্বর ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে ডেকে এনে চিহ্নিত যুদ্ধপরাধী (বর্তমানে কারাবন্দি) মাহবুবুল হক বাবুল চিশতিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিনিময়ে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব নিয়েছে একটি লিফট ও মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা। বিভিন্ন সময়ে জানালার ফাঁকে গ্রিলে, শলা কাঠি দিয়ে, রাতের বেলায় প্রেসক্লাব ভবনে জাতীয় পতাকা উড্ডীন রেখে ও নিয়ম বর্হিভূতভাবে পতাকা ব্যবহার করে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে। মন্দির গুড়িয়ে দিয়ে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ প্রেসক্লাবের নামে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। যা বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালিত সরকার, সরকারি নীতিবিরোধী, গর্হিত ও শাস্তিযোগ্য আপরাধ। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জাতীয়-স্থানীয় সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারি বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে হুমকি-ধমকি এবং সাংবাদিদের নামে আদালতে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষ।
এ নিয়ে বিভিন্ন সময় তথ্য প্রমানসহ ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সুপার ও ডিআইজিকে অবহিত করেও কোনোরূপ ফল মিলছে না।
সাংবাদিকদের অভিযোগ, প্রেসক্লাব সভাপতি ও কর্তৃপক্ষের এহেন কর্মকাণ্ডের বিশদ তথ্য প্রমাণ দেওয়া হলেও কোনোরূপ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জাতীয় পতাকার অবমাননাকারী, যুদ্ধপরাধী বাবুল চিশতিকে সংবর্ধনা দেওয়া, বিনিময়ে তার কাছ থেকে লিফট ও আর্থিক সুবিধা নেওয়া, মন্দির গুঁড়িয়ে দখল ও সরকারি সম্পত্তি গ্রাসসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কোনো ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা, কোনো তদন্ত না করেই বিষয়গুলো ধামাচাপা দিয়ে আসছে।
সাংবাদিকরা আরও অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসকগণ পদাধিকার বলে ময়মনসিংহ ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে থাকেন তাই এসব বিষয় এড়িয়ে যান। জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে কোনো প্রতিষ্ঠান এহেন কর্মকাণ্ড ও উল্লেখিত রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধের দায় জেলা প্রশাসক এবং প্রশাসন এড়াতে পারে না বলেও স্মারকলিপিতে দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। তাই অবিলম্বে বিষয়গুলো তদন্তপূর্বক প্রেসক্লাব সভাপতি ও কর্তৃপক্ষ ও প্রকৃত দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার জোড় দাবি করা হয়েছে মানববন্ধন থেকে।
সমাবেশে সাংবাদিক শিবলী সাদিক খানের সভাপতিত্বে ওয়াহিদুজ্জামান আরজুর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সিনিয়র সাংবাদিক হাফিজুর রহমান হেলাল, সুবিনয় কুমার গুহ, মো. আরিফ রেওগীর, আজহারুল আলম, উজ্জ্বল খান, সেকান্দার, বদরুল আমিন, মো. মাইনুদ্দিন উজ্জ্বল, তাসলিমা রত্না, আ. হাকিম, নূরুল ইসলাম জিহাদী, হাবিবুর রহমান হাবি, বাপ্পি দাশ, তসলিম সরকার, মো. ফজলুল হক, দিলিপ বাবু, মারুফ হোসেন, অ্যাডভোকেট রোকসানা আক্তার, নজরুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম ফারুক, নিহার রঞ্জন কুণ্ডু, দিপক চন্দ্র দে, আজগর হোসেন রবিন, খাইরুল আলম রফিক, গোলাম কিবরিয়া পলাশ প্রমুখ।
বক্তারা হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে স্মারকলিপি প্রদানের পরও কোনোরূপ ব্যবস্থা না হলে সাংবাদিকরা কঠোর আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে সাংবাদিক তাপস গোয়ালা, রাজন লাল সরকার, ইমরুল আহসান, সোহানুর রহমান সোহান, উমর ফারুক, মিজানুল ইসলাম, রেজাউল করিম, মমতা বেগম পপি, সুমি আক্তার, আমিনুল ইসলাম রবি উপস্থিত ছিলেন।