সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সালিশের ভিডিও, ধর্ষক গ্রেপ্তার
টাকায় হয় সালিশে রায়, চলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, নাকে খত, জুতার বাড়ি। সালিশবাণিজ্যসহ এমন নানা অত্যাচার ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদারের বিরুদ্ধে। এতে মানুষ আস্থা হারাচ্ছে গ্রাম আদালতের শালিসের ওপর।
ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদারের শালিসের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলার সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠে। পরে এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ ধর্ষক শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। তবে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় গত বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে এক গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন শফিকুল। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান সাজানো শালিসে অভিযুক্তকে নাকে খত, জুতাপেটা ও মাত্র এক হাজার টাকার জরিমানা করে ঘটনাটি মীমাংসা করে দেন। পরে ওই শালিসের একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রচার হলে নড়ে চরে বসে স্থানীয় প্রশাসন। গ্রেপ্তার করে ধর্ষক শফিকুল ইসলামকে। তিনিও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা।
গৃহবধূর স্বামী বলেন, ‘শফিকুল আমার স্ত্রীকে ধর্ষণ করলে আমি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদার, কালাম মেম্বারসহ অনেককে বিষয়টি জানাই। তাঁরা সালিশ করে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। তাঁরা আমাকে বলেন, আমি এ রায় মেনে না নিলে আমার বৌকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাই এমন লিখে দিবেন। কিন্তু আমি এ রায় মেনে না নিয়ে থানায় অভিযোগ করি। আমরা ভূমিহীন বলে কি আমাদের মান নেই? আমাদের ইজ্জতের দাম কি এক হাজার টাকা? চেয়ারম্যান জোর করে রায় মেনে নিতে আমাদের বাধ্য করে। কিন্তু আমি এ রায় মানি না, আমি ধর্ষকের বিচার চাই।’
চাকলা ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী সরদার বলেন, ‘উভয় পক্ষের সম্মতিতেই এই বিচার করা হয়েছে।’
‘ধর্ষণের বিচার তিনি করতে পারেন কি না এবং এক হাজার টাকা জরিমানা করেছেন কি না’ জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা কথা।’
বেড়া মডেল থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশিদুল ইসলাম বিষয় নিশ্চিত করে জানান, ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ সাংসারিক কাজ করছিলেন। এ সময় শফিকুল ইসলাম তাঁর ঘরের দরজা খোলা পেয়ে প্রবেশ করে দরজাটি বন্ধ করে দিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ শনিবার রাতে থানায় মামলা করেন। মামলার পরই আসামি শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
ওসি রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’