গোপালগঞ্জে সেবাশ্রমের নারী পুরোহিতকে শ্বাসরোধ করে হত্যা
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মালিবাতা গ্রামের মালিবাতা বিশ্ববন্ধু সেবাশ্রমের পুরোহিত হাসিলতা বিশ্বাসকে (৭০) শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার (২ মার্চ) রাতে মন্দিরের ভিতরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
হত্যার পর স্বর্ণালংকার ও মন্দিরের প্রণামীর টাকাসহ মূল্যবান কাগজপত্র লুট করা হয়। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ফরিদপুর থেকে সিআইডির ক্রাইম সিনের তিন সদস্যের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে আলামত ও তথ্য সংগ্রহ করছেন।
আজ রোববার (৩ মার্চ) সকালে গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ মন্দিরের ভিতর থেকে হাত-পা বাধা ও মুখে কাপড় ঢোকানো অবস্থায় হাসিলতার মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত হাসিলতা একই উপজেলার নিজড়া ইউনিয়নের নিজড়া গ্রামের দোয়ানীপাড়ার মৃত বিপিন বিশ্বাসের স্ত্রী। ঘটনার খবর পেয়ে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মাহবুবুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. খায়রুল আলম, গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমানসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ও সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেন তারা।
মালিবাতা বিশ্ববন্ধু সেবাশ্রমের সেক্রেটারি গৌতম পাণ্ডে জানান, প্রায় আড়াই বছর ধরে বিশ্ববন্ধু সেবাশ্রমের পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন হাসিলতা। তিনি সেবাশ্রমের মন্দিরের উত্তর পাশের একটি কক্ষে একাই থাকতেন। শনিবার রাতের যে কোনো সময় সেবাশ্রমের মন্দিরের গেটের তালা ভেঙে দুর্বৃত্তরা ভিতরে ঢুকে হাসিলতাকে হত্যা করে মন্দিরের পূর্বপাশের বারান্দার মেঝেতে ফেলে রেখে যায়। মন্দিরের আলমারি ও প্রণামীর বক্স ভেঙে লুট করে নেওয়া হয় নিহত পুরোহিতের একটি সোনার চেইন, কানের দুল, প্রণামী বাক্সের কিছু নগদ টাকা ও মূল্যবান কাগজপত্র।
মন্দিরের পূজারী চন্দ্রা রানী পাণ্ডে জানান, প্রতিদিনের মতো রোববার সকালে মন্দিরে প্রণাম করতে গিয়ে দেখতে পান মন্দিরের তালা ভাঙা। এ সময় হাসিলতাকে দেখতে না পেয়ে ডাকাডাকি করেন। সাড়া না পেয়ে এলাকার লোকজনকে ডেকে মন্দিরে ঢুকে হাত-পা বাধা ও মুখে কাপড় ঢোকানো অবস্থায় হাসিলতার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে মন্দিরের পূর্ব পাশে তার পায়ের স্যান্ডেল ও গলার তুলসী মালার ছেড়া অংশ দেখতে পান।
মন্দিরের সাবেক সেক্রেটারি উজ্জ্বল পাণ্ডে জানান, এলাকার কিছু বখাটে ও মাদকাসক্তরা এসে এই মন্দিরের পূজারী হাসিলতার সাথে অসদাচরণ করত। তারা মাঝে মধ্যে মন্দিরের আশেপাশে বসে মাদক সেবন ও হইহল্লা করত। পুরোহিত হাসিলতা অতিষ্ঠ হয়ে দুমাস আগে আমাদের কাছে এ বিষয়টি জানান।
বিশ্ববন্ধু সেবাশ্রমের সহ-সভাপতি শিপন বিশ্বাস সুশীল জানান, এভাবে পুরোহিতকে হত্যা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শ্বাস রোধ করে হাসিলতাকে হত্যা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ফরিদপুর থেকে তিন সদস্যের সিআইডির ক্রাইম সিনের একটি টিম ঘটনাস্থলে দুপুরে পৌঁছে বিভিন্ন আলামত, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছেন। কে বা কারা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনও জানতে না পারলেও তদন্তে হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসবে।
পুরোহিত হাসিলতার মরদেহ উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ আড়াইশ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে তদন্ত ও গ্রেপ্তার অভিযান চলছে বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।