বাংলাদেশের প্রয়োজনে ভারত সর্বদা পাশে থেকেছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বাংলাদেশের দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ভারত আমাদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করেছে। তারা আমাদের অর্থ সহায়তা ও এক কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। এদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের হাজারও সেনা মারা গেছে। প্রতিবেশী দেশের সমর্থনে যুদ্ধ করে তারা শহীদ হয়েছে। তাদের সার্বিক সহায়তা এবং আত্মত্যাগকে আমরা স্যালুট জানাই।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মিত্র দেশ ভারতের সৈন্য প্রত্যাহারের ৫২ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। আজ মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ইশারায় তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ সালের ১২ই মার্চ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারের এই ঘটনা বিরল। এটি বঙ্গবন্ধুর বিশাল ব্যক্তিত্ব ও দূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ। বঙ্গবন্ধু ও মিসেস গান্ধীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রয়োজনে ভারত সর্বদা পাশে থেকেছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধে কত মানুষ মারা গেছে এটা নিয়ে অনেকে সন্দেহ করে, অনেক কথাবার্তা বলে। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তারা জানে কত মানুষ শহিদ হয়েছে। আমার পাশে থেকে যে যুদ্ধ করেছে সে শাহাদাতবরণ করেছে। তাছাড়া আমার সাথে যুদ্ধ করা অনেকেই শহীদ হয়েছেন৷ এটা নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই।
দুই দেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। এরপর মুক্তিযুদ্ধে মিত্র বাহিনীর অবদান, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এবং পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত বীর মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক লে. কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ আলী জহির এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশফাক হোসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ভারতের সহযোগিতা ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা অর্জন এত সহজ ছিল না। ডিসেম্বরে ভারতীয় সৈন্যরা ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ শুরু করে। এর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা শুধু গেরিলা যুদ্ধ করেছে। তাদের সাথে যৌথ হামলায় আমরা বিশ্বের অন্যতম সেরা সেনাবাহিনীকে (পাকিস্তানি বাহিনী) পরাস্ত করেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের অনেক সৈন্য জীবন দিয়েছেন। আমরা তাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিরাজমান মৈত্রীর এই বন্ধন চিরদিন অটুট থাকবে।
উপাচার্য আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অসাধারণ দক্ষতার কারণেই অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়। এর মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি পর্ব সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হই। সৈন্য প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদানও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। ইতিহাসের এসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ঘটনা দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভারত ও বাংলাদেশের এই সম্প্রীতি, বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা বর্তমানে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।
ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ৫২ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম বজলুর রহমান ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এছাড়াও সেমিনারে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা, সেনাসদর দপ্তরের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল মো. মজিবুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার।