তালাকের পর তালিকা ধরে উপহার ফেরত নিলেন টুকটুকি
তালাক হয়েছে তাই যৌতুক নিরোধ আইনে মামলা, এরপর বিভিন্ন সময়ে ছেলেপক্ষকে দেওয়া উপহার তালিকা করে ফেরত নিয়েছে মেয়েপক্ষ। গত মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) ঘটে এমন একটি বিরল ঘটনা। জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে ছেলেপক্ষ থেকে মেয়েপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন উপহার সামগ্রী।
জেলা জজ আদালতের সন্নিকটে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ সময় এক পক্ষ থেকে অন্য পক্ষকে একটি লিস্ট ধরে বিছানার চাদর, লেপ, তোষক, কাঁথা, বালিশ, কোলবালিশ, খাট, ড্রেসিং টেবিল, হাড়ি-পাতিল, মসলাসহ বিভিন্ন কৌটা, কোটা ভর্তি চিনি, লবণ, মসুর ডাল, বটি, গ্যাসের চুলা, কাপ, পিরিচ,পানির কলসি, রাইস কুকার, প্রেসার কুকারসহ বিভিন্ন গৃহস্থলী সামগ্রী বুঝিয়ে দেয়। আর ঘটনাটি ঘিরে জটলা হয় উৎসাহী মানুষের।
সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ‘মেহেরপুরে প্রতি ৫ ঘণ্টায় এক তালাক’ শীর্ষক নিউজ এবং ‘দক্ষিণের একটি জেলায় বছরে বিয়ে ২১০০, তালাক ১৯০০’ শিরোনামে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে জেলাতে ব্যাপক তোলপাড় ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার ১৯ মার্চ দেখা মেলে এই বিরল ঘটনার। বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায় জেলার গাংনী উপজেলার কসবা গ্রামের মো. কাউসারের মেয়ে মোছা. টুকটুকি খাতুনের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কূলতাডাঙ্গা গ্রামের মো. লিটনের ছেলে মো. লিংকনের তিন বছর আগে বিয়ে হলেও পরবর্তী সময়ে নিজেদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় বিচ্ছেদ হয়। এরপর মেহেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যৌতুক নিরোধ আইনে সাবেক স্বামী লিংকনের বিরুদ্ধে টুকটুকি খাতুন নারী নির্যাতন ও যৌতুকের দুটি মামলা করেন। আদালত উভয় পক্ষের আইনজীবীকে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসার নির্দেশ দেন। সেই সমঝোতার ফলশ্রুতিতেই দেখা যায় এই বিরল দৃশ্য।
ছেলেপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেল বলেন, ‘মেহেরপুরের তালাক মহামারির বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসার পর সবার নজরে এসেছে। আমরা যারা আইনজীবী রয়েছি তারা মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে দেখতে পাই তালাকের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছেলে ও মেয়ের থেকে তাদের মা-বাবার ভূমিকাই প্রকট হয়ে ওঠে। আর এ সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায় গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের অভিভাবকের ক্ষেত্রে। তালাকের মামলার ক্ষেত্রে হয় ছেলে বা মেয়ে একটি পক্ষ জিতে যায়। অনেক ক্ষেত্রে তালাক হওয়াতে উভয় পক্ষই ভাবে তারা জিতেছে। তবে দিনশেষ হেরে যাই তাদের সন্তানরা। এই মামলার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে রাজি না হওয়ায়, এবং কেউ কাউকে কোনো ছাড় না দিতে চাওয়ায় ফলাফল আপনারা দেখেছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গণে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রাঙ্গণে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি নিয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি মেহেরপুরের গাংনী ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহযোগী অধ্যাপকসাইদুর রহমান বলেন, ‘লিস্ট করে মালামাল ফেরত দেওয়ার বিষয়টি একদিকে যেমন হাস্যকর অন্যদিকে দুঃখজনকও বটে। জেলাতে যে তালাকের মহামারি দেখা দিয়েছে সেটা নিয়ে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে সামাজিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।’