জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব : চার কোটি মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কা
জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি শিকার বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো। লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে সেসব অঞ্চলে কৃষিজমি কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ, বাস্তুচ্যুত হচ্ছে মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৪০ সাল নাগাদ দেশে বাস্তুচ্যুত হবে প্রায় চার কোটি মানুষ। এ ছাড়া বিরূপ এ আবহাওয়া কৃষি, ডেইরি পোলট্রিসহ পুরো জীববৈচিত্র্যে প্রভাব ফেলছে। দিন দিন আবহাওয়া ধারণ করছে রুদ্ররূপ।
বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর বিপুল কার্বন নিঃসরণ করায় তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তাপমাত্রার এ অস্বাভাবিক বাড়ার প্রভাবে গলছে বরফ, বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। ফলে বিস্তীর্ণ উপকূলে লবণাক্ত পানি ঢুকে দেশের খুলনা-সাতক্ষীরার মতো জেলাগুলোকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বেশ কিছু গবেষণা থেকে দেখা যায়, ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণের তিন জেলায় কৃষিজমি কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।
গবেষণা বলছে, ২০০০ সাল পরবর্তী ১০ বছরে এসব অঞ্চলে জনসংখ্যা কমেছে ৬০ হাজার, কমেছে সুপেয় পানি, বেড়েছে অতি দরিদ্র মানুষ, নারীদের গর্ভপাতের হার কমেছে ১১ শতাংশ।
দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, ‘মানুষ বাধ্য হয়েছে বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্য জায়গায় সরে যেতে। এ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২০৪০ সালে ৪০ মিলিয়ন হবে। এসব এলাকাগুলোতে আস্তে আস্তে লবণাক্তের পরিমাণ বেড়ে যাবে। কারণ, ওপরের দিকের মিঠা পানির যে প্রবাহ, সেটি ফারাক্কা বাধসহ বিভিন্ন কারণে অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি বড় ধরনের নাজুকতা তৈরি করবে।’
এদিকে তীব্র তাপে মানুষের পাশাপাশি বিপাকে পড়েছে পুরো কৃষি ও প্রাণীজগৎ। অতি গরমে ডেইরি ও পোলট্রি ফার্মগুলোতে মড়ক দেখা দিচ্ছে। কৃষিতে সেচের পানি মিলছে না, ঝরছে আম ও লিচু। যার প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি ও কৃষি সংস্থান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী বলেন, ‘বর্তমানে লেবার খরচ বেশি। সেই সঙ্গে সেচের খরচ তো আছেই। যে জমিতে আগে দুটি সেচ লাগত সেসব জমিতে এখন পাঁচ থেকে নয়টি সেচও লাগছে। জলবায়ুর প্রভাবে উৎপাদন কমে যাবে। ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আর কৃষি উৎপাদন কমে গেলে খাদ্যের সরবরাহ কমে যাবে। যার প্রভাব পুরো খাদ্য মূল্যস্ফীতিটাকে উস্কে দেবে। এ ছাড়াও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার যেমন ফলমূল, শাকসবজির উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমে যেতে পারে।’
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষ পেশা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এলাকাও পরিবর্তন করছে। যার চাপ পড়ছে রাজধানী ঢাকার ওপর। বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে এ ধরনের ঘটনা উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আরও ঘটতে পারে।