আনার নিহতের খবরে কালীগঞ্জে শোকের মাতম
ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় কালীগঞ্জে চলছে শোকের মাতম। ভারতে বিধান নগর পুলিশ এখনও আনারের পূর্ণাঙ্গ ডেডবডি পায়নি। পূর্ণাঙ্গ বডি পাওয়ার পরে দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গেছে।
আনারের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফের দেওয়া তথ্য মতে, আনার নিখোঁজ হওয়ার পর পরই কলকাতার ১৭/৩ মণ্ডলপাড়া লেনের বাসিন্দা মৃত ষষ্ঠীরামের ছেলে গোপাল বিশ্বাস পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেননি। পরবর্তী সময়ে নিজে বাঁচতে ১৮ মে লোকাল থানায় জিডি করেন। এরপর তিনি আনারকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। একপর্যায়ে ভারতের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হন গোপাল। আজ বুধবার (২২ মে) তাকে অবশ্য কলকাতা পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম জানিয়েছে। গোপালের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না তা বের করার চেষ্টা করছে ভারতীয় পুলিশ। বাংলাদেশে আটকের বিষয়টিও এখন প্রকাশ করা হয়নি।
আজ সকাল থেকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার নিহত হওয়ার খবরে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নিউটাউন এলাকার একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাঁকে। সকাল অনুমান ১০টার দিকে গণমাধ্যমে নিহত হওয়ার খবর প্রকাশ করা হয়। এর পর থেকে এমপি আনারের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের বাসভবনে দলীয় নেতাকর্মীরা ছুটে আসেন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তাঁরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা উপজেলা শহরের শোকের মাতম শুরু হয়। আনারের বাড়ি সামনে ভুষন হাই স্কুল মাঠে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমর্থক জড়ো হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু আজিফসহ প্রশাসনে লোকজন আনারের বাড়ির সামনে আসেন এবং নেতকর্মীদের সান্ত্বনা দেন।
দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুসহ নেতৃারা সেখানে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম ও কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শিবলি নোমানী, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বিজু জড়িতদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেন।
মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটনানো হয়েছে। তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করার জন্য ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আনারের কালীগঞ্জ শহরের বাড়িতে কেও নেই। স্ত্রী, দুই কন্যা ঢাকায় এমপি হোস্টেলে।
আনার ২০০৮ সালে প্রথম কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯২ সালে কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে ভারতে পলাতক থাকা অবস্থায় কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। ২০১৪ সালে প্রথম ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ভালো ফুটবল খেলতেন। খেলোয়াড় হিসেবে এলাকায় নাম-ডাক ছিল তাঁর।
১২ মে আনারের ভারত যাওয়া ছিল ভিন্ন রকমের। ওই দিন ভ্যানে চড়ে বর্ডার পাড়ি দেওয়া দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ছবি তুলেছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িচালক তরিকুল ইসলাম।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার ১২ মে চিকিৎসার জন্য ভারতের পশ্চিবঙ্গে যান। সেখান থেকে ১৬ মে নিখোঁজ হন তিনি। সেই থেকে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় পড়েন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। স্ত্রী ইয়াসমিন ফেরদৌস, বড় মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন, ছোট মেয়ে অরিন ফেরদৌস আনারের মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। ১৩ মে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। ১৬ মে মিসড কল পেয়েছেন ব্যক্তিগত সহকারী। ১৯ মে ১২টার দিকে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ঢাকার মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে যান। ডরিন ডিবি কার্যালয়ে যাওয়ার পরে ঘটনাটি সামনে চলে আসে। ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে এর আগে থেকেই বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলকে অবহিত করা হয়। শেষ পর্যন্ত মরদেহের আংশিক উদ্ধারের খবর।
ভারতে করা জিডি সূত্রে জানা যায়, ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতার ১৭/৩ মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে উঠেন আনার। দীর্ঘ ২০-২৫ বছরের পারিবারিক সম্পর্ক তাঁদের। ১৩ মে বেলা ১টা ৪১ মিনিটের দিকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গোপালের বাড়ি থেকে বের হন তিনি। তাঁকে একটি কার ডেকে দেন গোপালের কর্মচারী শুভজিৎ। এরপর একটি গাড়িতে উঠেন তিনি। সেসময় কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে বিধান পার্কে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।
যাওয়ার সময় আনার বলে যান দুপুরে খাব না। ১৫ মে বেলা ১১টা ২১ মিনিটের সময় দিল্লি পৌঁছিয়ে গেলাম বলে গোপালের হোস্টএপে মেসেজ পাঠান তিনি। এই মেসেজ পাঠানো হয় এমপির পিএ রউফসহ পরিবারের কাছে।