প্রথম দিনে কাপ্তাই হ্রদে মেলেনি আশানুরূপ মাছ
আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসে কাপ্তাই হ্রদে। জাল ও জেলের মিতালি শুরু হয়েছে ১২৭ দিন পর। হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি এবং অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর তিন মাস এই হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকে। এ বছর হ্রদে পানি কম থাকায় ৯০ দিনের স্থলে ১২৭ দিন মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি রাখে জেলা প্রশাসন।
আজ রোববার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে আবারও ফিরে এসেছে কাপ্তাই হ্রদের সেই চিরচেনা রূপ। ভোর হতেই জেলেদের আহরণ করা মাছ নৌকায় করে নিয়ে আসা হয় জেলার সর্ববৃহৎ অবতরণ কেন্দ্র ফিসারি ঘাটে। এতে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠেছে পল্টুন। তবে এবার পানি বেশি থাকা এবং আঞ্চলিক দলের চাঁদার কারণে হ্রদের একটি অংশে জেলেরা মাছ আহরণে না নামায় প্রথম দিনে প্রত্যাশিত মাছ আহরণ হয়নি।
জেলে বাদল দাস বলেন, ‘হ্রদে প্রচুর পানি এবং স্রোত থাকায় জাল টানা যাচ্ছে না। পানি স্থির না হওয়া পর্যন্ত জালে মাছ আসবে কম। তবুও দীর্ঘ দিন পর জাল নিয়ে হ্রদে নামতে পারায় আমরা সবাই খুশি। বন্ধকালীন বেকার সময় কেটেছে। পরিবার নিয়ে কষ্টে ছিলাম। আশা করি জালে মাছ আসবে। আমাদের কষ্ট দূর হবে।’
আরেক জেলে বাঁধন দাস বলেন, ‘পানি কিছুটা কমে এলে জালে মাছ আসবে। অন্যান্য বছর প্রথম দিনে প্রতিবার পাঁচ-ছয় ড্রাম মাছ পেতাম। এ বছর প্রথম দেন ১০ থেকে ১২ কেজির বেশি মাছ পাওয়া যাচ্ছে না।’
কাপ্তাই হ্রদ বৃহত্তর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর শুক্কুর জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় হ্রদে এ বছর পানি বেশিসহ কিছু সমস্যা থাকায় জেলেদের জালে প্রথম দিন মাছ কম ধরা পড়েছে। এখনও অনেকেই মাছ আহরণে নামেনি। তাই প্রথম দিন প্রত্যাশিত মাছ আহরণ হয়নি।’
এদিকে আঞ্চলিক দলের চাঁদাবাজির অভিযোগে কাপ্তাই উপজেলার জেলেরা হ্রদ থেকে প্রথম দিন মাছ আহরণ করেননি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, হ্রদে মাছ শিকার ও পরিবহণের জন্য স্থানীয় আঞ্চলিক দলগুলোকে চাঁদা দিতে হয়। এ বছর তারা চাঁদার হার দ্বিগুণ করেছে। যা অনেক ব্যবসায়ী ও জেলের পক্ষে এখনও দেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার আশরাফুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, ‘জেলেদের মধ্যে নানাবিধ আশঙ্কা কাজ করছে বলে আমি শুনেছি। যার কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর প্রথম দিনে সকাল থেকে ঘাটে মাছ অবতরণ কম হচ্ছে। এ বছর পানির পরিমাণ যেহেতু অনেক বেশি। আমরা আশা করছি আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে, সেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মাছ আহরণ ও রাজস্ব আদায় হবে।’
বিএফডিসি সূত্র মতে, মৎস্য আহরণের প্রথম দিনে ৬৫ মে. টন মাছ আহরণ হয়েছে। যা থেকে রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ১৩ লাখ টাকা। রাঙামাটির চারটি অবতরণ ঘাটের মাধ্যমে এ রাজস্ব আদায় হয়।