মহাপরিচালক নিয়োগে অসন্তোষ, ২ দিনের কর্মবিরতি ঘোষণা
নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
আজ রোববার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজারের রামুতে অবস্থিত বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে নতুন মহাপরিচালক নিয়োগ ঠেকাতে বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।
এ সময় বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দাবি বাস্তবায়নে আগামীকাল সোমবার ও মঙ্গলবার দুদিনের কর্মবিরতির কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
এ সময় ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা বলেন, নতুন মহাপরিচালকের মাধ্যমে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হলে এই ইনস্টিটিউটের প্রাতিষ্ঠানিক গ্রহণযোগ্যতা হারাবে।
প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানী মো জাকারিয়া জানান, গত ৭ অক্টোবর বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে পদায়নের প্রস্তাব করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যা এই ধরনের গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণ এবং গবেষণার গ্রহণযোগ্যতার পরিপন্থি।
জানা গেছে দেশের সমুদ্র গবেষণার একমাত্র জাতীয় প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারের রামুতে অবস্থিত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক পদে নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করায় প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা- কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ নিয়োগ বাতিল চেয়ে বোরির ৫২ কর্মকর্তা-কর্মচারী গত বুধবার (৯ অক্টোবর) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। গত ৭ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নৌবাহিনীর কর্মকর্তা কমোডর মো. মিনারুল হককে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক প্রেষণে নিয়োগ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মামুন শিবলীর সই করা প্রজ্ঞাপনে এ নিয়োগের কথা জানানো হয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞানী ও কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির ৫২ বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ নিয়োগের বিরোধিতা করে অবিলম্বে তা বাতিল এবং এ পদে কোনো স্বনামধন্য বিজ্ঞানী, গবেষক, একাডেমিশিয়ান অথবা অন্য কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগের দাবি জানান। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি ও পেনশন সুবিধা দেওয়ারও দাবি তুলেন তাঁরা।
প্রধান উপদেষ্টা বরারর পাঠানো স্মারকলিপিতে এ দাবি আদায় না হলে তাঁরা কর্মবিরতির মতো কর্মসূচিতে যাওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে নিজেদের পূর্ণ সমর্থন ছিল এবং চলমান রাষ্ট্র সংস্কারে নিজেদের একাত্মতা রয়েছে জানিয়ে সমুদ্র গবেষণা ইউনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্মারকলিপিতে লিখেছেন, দেশে সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরিবর্তন করা হচ্ছে, যা সরকারের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমরা জানতে পেরেছি যে, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তাকে নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইউনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত এ রকম জটিল ও নিবিড় সায়েন্টিফিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে একজন সামরিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থবির হয়ে পড়বে এবং প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী একত্রিত হয়ে আবেদন জানাচ্ছি যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানে মহাপরিচালক হিসেবে আমরা কোনো সামরিক কর্মকর্তা নিয়োগ চাই না। কোনো স্বনামধন্য বিজ্ঞানী, গবেষক, একাডেমিশিয়ান বা সিভিল প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা বা যোগ্য অন্য যেকোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো আপত্তি নেই।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘বোরির ডিজি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই ।’