বেলজিয়ামে যাচ্ছে বাগেরহাটের তৈরি কাঠের ঘর, বাড়ছে কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা
বাগেরহাটের কাঠের ঘর সাড়া ফেলেছে ইউরোপে। এমনকি নতুন বাজার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা রাখছে। সৃষ্টি হয়েছে নতুন উদ্যোক্তা। পলিথিনের দাপটে যখন দক্ষিণাঞ্চলের কাঠ ব্যবসায়ীরা দুঃশ্চিন্তায়; ঠিক সেই সময়ে বাগেরহাটের তৈরি কাঠের ঘর যাচ্ছে বেলজিয়ামের ইকোপার্কে। সেখানে ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জনের নতুন খোরাক তৈরি করছে এই কাঠের ঘর।
পরিবেশবান্ধব, আরামদায়ক ও নান্দনিক হওয়ায় বিশ্বের বহু দেশে কাঠের ঘরের চাহিদা তৈরি হয়েছে। রিসোর্ট, কটেজ ও পার্কে এমন ডিজাইনের ঘরের কদর দিন দিন বেড়েই চলছে। ‘বোট টাইনি হাউজ’নামে ইকো-কটেজগুলো পর্যটকদের থাকার জন্য খুবই আকর্ষণীয় এই কাঠের ঘরগুলো।
প্রায় ৬ মাস ধরে বাগেরহাটের কররী গ্রামে ‘ন্যাচারাল ফাইবার’ নামের একটি কারখানা বেলজিয়ামের জনপ্রিয় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা ‘পাইরি ডাইজা’য় স্থাপনের জন্য এসব ঘর তৈরি হচ্ছে। ঘরের আসবাবপত্রসহ সকল মালামাল কাঠ দিয়ে তৈরির জন্য প্রাথমিকভাবে ওই প্রতিষ্ঠানটি ১১০টি ঘরের ক্রয়াদেশ পেয়েছে।
পরিবেশের ক্ষতি না করে এমন পণ্য ব্যবহার করে ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম থেকে চলতি বছরের প্রথম দিকে ১২০টি বসতঘর তৈরির অর্ডার পান বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ। এরপর থেকে পরিবেশ বান্ধব বসতঘর তৈরির উদ্যোগ নেয় তার প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাচারাল ফাইবার’।
বাগেরহাটের সদর উপজেলার বিসিক শিল্পনগরীর ন্যাচারাল ফাইবার নামের কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে কাঠের এসব বসতঘর। সরেজমিনে বিসিক শিল্পনগরী গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকদের মধ্যে কেউ তৈরি করছেন বসতঘরের দরজা, জানালা, কেউ ফ্রেম আবার কেউ তৈরি করছেন দেয়াল।
কাঠের এসব ফ্রেম শ্রমিকদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রং ও পালিশের মাধ্যমে শেষ করা হচ্ছে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব কাঠের বসতঘরগুলো। প্রথমে কাঠ কেটে সাইজ করেন। এরপর বিভিন্ন অংশকে ছোট আকারে খন্ড খন্ড করা হয়। ফলে পুরো ঘরটিকে স্বল্প স্থানে পরিবহণ করা সহজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই খন্ডাংশগুলো জুড়ে দিলে সহজেই যেকোন জায়গায় স্থাপন করা যায় ঘরগুলো।
একটি ঘর দেখিয়ে উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ জানান, কাঠমিস্ত্রীদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারপর ডিজাইন দেখে বসতঘর তৈরি করা হয়েছে। এরপর কোম্পানি ও বিদেশি লোকজন দেখে পছন্দ করেছে। এখন পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতিটি বসতঘর তৈরি করতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। এই বসতঘর তৈরিতে প্রায় ২০০ শ্রমিক কাজ করছে বলে জানালেন কাঠমিস্ত্রী মোজাহিদুল ইসলাম।
আগে কখনও এই ঘর তৈরি করিনি। এখন খুবই সুন্দর হয়েছে ঘরগুলো। সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে এভাবে ঘর তৈরি করা যায়, তা কখনও ভাবতেও পারিনি বলে জানালেন কারখানার শ্রমিক শরিফুল ইসলাম।
আরেক শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, হাতে তৈরি কাঠের ঘর বিদেশে যাচ্ছে, এটা আমাদের দেশের জন্য গর্বের। এই ঘর তৈরি করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
কাজের অর্ডার পাওয়া ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ আহমেদ জানান, ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামের একটি ইকো পার্কের জন্য পরিবেশবান্ধব কাঠের তৈরি ১২০টি বসতঘর প্রয়োজন। যা আগামী দুই বছরের মধ্যে এই ঘরগুলো বেলজিয়ামে পাঠানোর জন্য হস্তান্তর করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের চুক্তি হয়েছে। দেশি মেহগনি কাঠ দিয়ে এই ঘরগুলো তৈরি করতে হবে। এছাড়া এসব ঘরের কাঁচামাল বায়োগ্রেডিবল বা পরিবেশে মিশে যায় এমন হতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো পণ্য চলবে না। আশেপাশের এলাকা থেকে সংগ্রহ করা কাঠ দিয়ে এসব ঘর তৈরি করা হচ্ছে।
বাগেরহাট ন্যাচারাল ফাইবারের কনসালটেন্ট মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা শাহিন জানান, সম্পূর্ণ লোকাল মেহগনি কাঠ দিয়ে তৈরি বসতঘর যদি মোংলা দিয়ে রপ্তানি করা হতো তাহলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হতো। আমাদের ঘরগুলো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাঠানো লাগে। তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, এই ঘর মোংলা বন্দর দিয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে।