প্রশিক্ষণরত আরও অর্ধশতাধিক এসআইকে শোকজ
রাজশাহীর সারদায় প্রশিক্ষণরত ৪০তম ক্যাডেট উপপরিদর্শক (এসআই) ব্যাচের ৫৯ জনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ ক্লাসে হৈচৈ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে গত সোমবার ও বৃহস্পতিবার তাঁদের এই শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়।
এর আগে গত ২১ অক্টোবর একই ব্যাচের ২৫২ এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (প্রশাসন) তারেক বিন রশিদ ৫৯ জনের শোকজ নোটিশে স্বাক্ষর করেছেন।
শোকজ নোটিশে বলা হয়েছে, গত ১৬ ও ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় অ্যাকাডেমির চেমনি মেমোরিয়াল হলে ক্লাস চলাকালে শোকজ নোটিশপ্রাপ্তরা এলোমলোভাবে বসে হৈচৈ করে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এ সময় তাঁরা পাশাপাশি বসে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলেন এবং ক্লাসে অমনোযোগী ছিলেন। নোটিশপ্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে তাঁদের অভিযোগের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে প্রশিক্ষণ মাঠে নাশকতা করতে হৈচৈ করার অভিযোগে ৪০তম ক্যাডেট এসআই ব্যাচের ২৫২ জনকে প্রথমে শোকজ করা হয়েছিল। তাদের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এবার প্রশিক্ষণ হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ৫৯ জনকে শোকজ করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) প্রশিক্ষণরত এক এসআইকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, গত ২১ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চেমনি মেমোরিয়াল হলে আইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারার ওপর প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআইদের ক্লাস ছিল। প্রশিক্ষণ চলাকালে পরিদর্শক পদমর্যাদার চার প্রশিক্ষক দেখতে পান, সিটে বসার সময় ওই প্রশিক্ষণরত এসআই শৃঙ্খলার সঙ্গে না বসে এলোমেলোভাবে বসে হৈচৈ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন। একজন প্রশিক্ষক বারবার শৃঙ্খলার সঙ্গে বসতে বললেও তিনি নির্দেশ অমান্য এবং সেদিকে কর্ণপাত না করে বসা নিয়ে হৈচৈ করতে থাকেন।
নোটিশে আরও বলা হয়, পাঠদানকালে এই এসআইয়ের ক্লাসে কোনো মনোযোগ ছিল না এবং পাশাপাশি বসে কথা বলছিলেন। এ জন্য একজন প্রশিক্ষক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাই বিধি অনুযায়ী কেন তাঁকে চলমান মৌলিক প্রশিক্ষণ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না, তিন দিনের মধ্যে তার জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এর আগে ২১ অক্টোবর ১০ এসআইকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের একটি কপি পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে, যেসব অভিযোগে ২৪ অক্টোবর এসআইদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, একই অভিযোগ ২১ অক্টোবরের চিঠিতেও। চিঠিতে বলা হয়, ১৬ অক্টোবর ওই একই সময়ে জিমনেসিয়ামে ‘এক্সপেরিয়েন্স শেয়ারিং ইন অর্ডার টু ফেইস পলিটিক্যাল এইমড’ বিষয়ে ক্লাস ছিল। সেদিন বিশেষ অতিথি বক্তা হিসেবে ছিলেন পুলিশ অ্যাকাডেমির সাবেক অধ্যক্ষ মো. নজিবুর রহমান। সেদিন এই এসআই শৃঙ্খলার সঙ্গে না বসে এলোমেলোভাবে বসেন এবং হৈচৈ করেন। তাঁকেও তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাসুদুর রহমান ভুইয়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ শাখায় কথা বলার পরামর্শ দেন।
যোগাযোগ করা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) এনামুল হক সাগর বলেন, এ বিষয়ে তিনি এখনও কিছু জানেন না। তিনি জানতে পারলে পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমকে জানাবেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৩ সালে এসআই পদে নিয়োগের জন্য শোকজপ্রাপ্তদের এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাকাডেমিতে পাঠানো হয়। ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষে আগামী নভেম্বর মাসে তাঁদের কর্মস্থলে যোগদানের কথা ছিল।