কারাগারে ডিভিশন পেলেন ব্যারিস্টার সুমন
মিরপুরের বাঙালিয়ানা ভোজের সহকারী বাবুর্চি হৃদয় মিয়াকে হত্যাচেষ্টা মামলায় হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হককে (ব্যারিস্টার সুমন) কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। কারাগারে ব্যারিস্টার সুমন ডিভিশন পেয়েছেন। সেখানে তিনি বিশেষ সুবিধা পাবেন।
আজ রোববার (২৭ অক্টোবর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন এই আদেশ দেন।
আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মোহাম্মদ জালাল বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে জানিয়ে বলেন, আজ ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষে তার আইনজীবী ডিভিশনের আবেদন করলে বিচারক ডিভিশন প্রদানের আদেশ মঞ্জুর করেন। সেই আদেশের কপি ইতোমধ্যে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে আজ পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ব্যারিস্টার সুমনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী ব্যারিস্টার সুমনের ডিভিশনের বিরোধিতা করে বলেন, আসামির ডিভিশন পাওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ দ্বাদশ যে নির্বাচন সেটা অবৈধ নির্বাচন। জনগণ সেই নির্বাচনে ভোট দেয় নাই। এদেরকে এমপি বলা যাবে না। তারা জনদুশমন ও জনশত্রু। জনগণের ভোট হরণকারী। এই কারণে আসামি ব্যারিস্টার সুমনের ডিভিশন নাকচ চাচ্ছি।
কারাগারে যারা ডিভিশন সুবিধা পান
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারে শ্রেণি (ডিভিশন) সুবিধা পান সাবেক এমপি, মন্ত্রী, সিআইপি ও সরকারি কর্মকর্তারা। এছাড়া ডিভিশন সুবিধার জন্য যে কোনো বন্দি নিজের সামাজিক অবস্থান তুলে ধরে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আদালত যদি কোনো বন্দিকে ডিভিশন সুবিধার আবেদন মঞ্জুর করে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়, তখন সেই বন্দি ডিভিশন সুবিধা পান।
নিয়ম অনুযায়ী সরকারি গেজেটেড অফিসাররা কারাগারে এলে ডিভিশন পান। বাকি যারা বিশিষ্ট ব্যক্তি বা সাবেক এমপি-মন্ত্রী তারা আবেদন করলে অথবা এ বিষয়ে আদালত নির্দেশনা দিলে ব্যবস্থা করা হয়। যাদের বিষয়ে আদালত বলবেন না তারা যদি আবেদন করেন তখন সে আবেদনটি ডিসির কাছে পাঠানো হয়, ডিসি যদি অনুমতি দেন তাহলে তাদের ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হয়।
ডিভিশনে যে সুবিধা মেলে
জেল কোড অনুসারে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কারাগারে ডিভিশন দেওয়া হয়। এছাড়া আদালতের নির্দেশেও কেউ কেউ ডিভিশন পান। তিন শ্রেণির ডিভিশন দেওয়া হয়। ডিভিশন-১, ডিভিশন-২ ও ডিভিশন-৩।
যারা ডিভিশন পান তাদের আলাদা রুম বা সেলে রাখা হয়। সেখানে থাকে খাট, ভালো বিছানা, টেবিল, চেয়ার, তোষক, বালিশ, তেল, চিরুনি, আয়নাসহ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস। ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের জন্য একজন করে সহকারী দেওয়া হয়। তারা সংশ্লিষ্ট বন্দির প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে দেন। ছেলে বন্দির ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হিসেবে ছেলে আর মেয়ে বন্দির জন্য একজন মেয়ে থাকবেন। এছাড়া কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের দেওয়া খাবার যাচাই-বাছাই করে তাদের দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া বন্দির চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বইপত্র এবং দু-তিনটি দৈনিক পত্রিকা পাবেন। সাধারণ বন্দিদের চেয়ে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির খাবারের মানও ভালো থাকে।
নথি থেকে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই হৃদয় জুমার নামাজ আদায় করে মিরপুর-১০ নম্বরে সমাবেশে যান। সেখানে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় এবং ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে ও গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হন হৃদয়। তিনি হবিগঞ্জের মাধবপুর ১০ নং হাতিয়াইন ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি। এ ঘটনায় তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার ৩ নম্বর আসামি ব্যারিস্টার সুমন।