শিক্ষকের বেত্রাঘাতে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ঈশান
শিক্ষকের নির্মম নির্যাতনে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ঈশান হোসেন (১২)। দুই পায়ে পচন এবং ফুসফুসসহ দেহের অন্য অঙ্গেও দেখা দিয়েছে প্রদাহ।
ঈশান সাভারের আমিনবাজার ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের আফসার আলীর ছোট ছেলে ও পার্শ্ববর্তী পাঁচগাছিয়া জামিয়া মদীনাতুল উলুম মাদ্রাসার উর্দু বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।
লেখাপড়ায় অমনোযোগিতার অভিযোগে মাদ্রাসা শিক্ষক মুফতি হোসাইন আহমদের উপর্যুপুরি বেত্রাঘাতে গুরুতর আহত হয়ে কাতরাচ্ছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ঈশানের বড় বোন আফসানা আক্তার জানান, প্রতিনিয়ত বেত্রাঘাতের কারণে ঈশানের দুই পায়ে পচন ধরেছে। ফুসফুসসহ দেহের অন্যান্য অঙ্গেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
প্রতিনিয়ত বেত্রাঘাতের কারণে ঈশান হোসেনের দুই পায়ে পচন ধরেছে এবং এর জের ধরে তার ফুসফুসসহ দেহের অন্য অঙ্গে সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে দাবি করেন বড় বোন আফসানা আক্তার।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক কাইয়ুম রিজভী বলেন, ‘দুই পায়ে পচন এবং ফুসফুসসহ ঈশানের দেহের অন্যান্য অঙ্গে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যে কারণে তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এবং স্বাভাবিকভাবে মূত্র ত্যাগ করতে পারছে না।’
‘ঈশানের দুই পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। তবে পচন ধরায় এই মুহূর্তে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়’ বলেও জানান তিনি।
ঈশানের মা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘গত ৬ অক্টোবর ঈশানের দুই পায়ের হাঁটুর নিচে হঠাৎ ফুলে ওঠে। প্রচন্ড ব্যথা। তারপর জ্বর হলে প্রথমে স্থানীয়ভাবে তার চিকিৎসা করানো হয়। একপর্যায়ে তাকে প্রথমে শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং পরে ইবনে সিনা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা তার দুই পায়ে অপারেশন করার পরামর্শ দেন এবং এ জন্য অনেক টাকা খরচ হবে বলে জানান।
হাতে চিকিৎসা করার মতো অর্থ না থাকায় গত ১২ অক্টোবর ঈশানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। নতুন উপসর্গ হিসেবে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
শারীরিক পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না হলে গত ১২ অক্টোবর ঈশানকে রাজধানীর দারুসসালাম এলাকার ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন পরিচালিত বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
পাঁচ দিন আইসিইউতে রাখার পর শ্বাসকষ্টের কিছুটা উন্নতি হলে পায়ের চিকিৎসার জন্য গত ২২ অক্টোবর ঈশানকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে কয়েক দিনের চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হলেও তার শ্বাসকষ্ট রয়েছে এবং সে স্বাভাবিক প্রস্রাবে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
হাসপাতালের শষ্যায় ঈশান জানান, ‘পড়া না পারলেই হোসাইন হুজুর আমারে বেত দিয়ে পায়ে পিটাইতো। স্যারের মাইর থেকে বাঁচতে হাতেপায়ে ধরলে কইতো তোরে পাঁচতলার ছাদ থেইক্যা ফালাইয়া দিমু। মাইর খাওনের এই কথা মায়েরেও কইতে পারি নাই।’
ঈশানের বোন আফসানা আক্তার জানান, আমার শিশু ভাইটার ওপর যে বর্বর ও অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানাবে। আমরা তার বিচার চাই।
ঈশানে বাবা পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। যে আয় করে তা দিয়ে সংসারই চলে না। ছেলের চিকিৎসার করাবো কি দিয়ে! অপরাধ রাখতে প্রথমদিকে মাদ্রাসা থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন আর তারা কোনো সহায়তা দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মুফতি হোসাইন আহমদ বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষে সাধারণত বেত ব্যবহার করা হয় না। তবে শিক্ষকরা শাসন না করলে শিক্ষার্থীরা মানুষ হবে কি করে। পড়া না পারলে মাঝেমধ্যে বেত ব্যবহার করতে হয়। তবে হাতের তালু ছাড়া অন্য কোথাও আঘাত করা হয় না।’
মুফতি হোসাইন আহমদ বলেন, ‘পড়া না পারার জন্য ঈশানের দুই হাতে আঘাত করা হয়। তবে পায়ে আঘাত করা হয়নি। এরপর থেকে ঈশান আর মাদ্রাসায় আসছে না। পরে জানতে পেরেছি সে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। হাতে আঘাতের কারণে কারও পায়ে পচন ধরতে পারে, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।’