দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনী
মিলিটারি অপারেশন্স পরিদপ্তরের কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত নৈরাজ্য প্রতিরোধ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং বিদেশি দূতাবাস ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করছি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অফিসার্স মেসে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইন্তেখাব হায়দার খান।
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার বলেন, তারা অনাকাঙ্ক্ষিত অরাজকতা প্রতিরোধ, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, বিদেশি কুটনীতিক ব্যক্তি ও দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কলকারখানাগুলোকে সচল রাখা, রাষ্ট্রের কেপিআই এবং গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাগুলোকে রক্ষা করা, মূল সড়কগুলোকে বাধামুক্ত রাখা, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার, বিভিন্ন চিহ্নিত অপরাধী ও নাশকতামূলক কাজের ইন্ধনদাতা ও পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, কক্সবাজার জেলায় এফডিএমএন ক্যাম্প এলাকার নিরাপত্তা বিধান করা এবং সার্বিকভাবে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার, যাতে তাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে, সেজন্য স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করছে।
ইন্তেখাব হায়দার বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহায্য করতে চাই, যাতে তারা সুন্দরভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারে।’
সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৩ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোট ২৪টি অবৈধ অস্ত্র এবং ৩৬৫ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে এবং দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ৪০টি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং ১৮টি সড়ক অবরোধ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।
ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, শিল্পাঞ্চল ছাড়াও ৬৩টি বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৬টি, সরকারি সংস্থা অথবা অফিস সংক্রান্ত একটি, রাজনৈতিক কোন্দল ছয়টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ৪০টি।
কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার আরও বলেন, যৌথ অভিযানে ২২৮ জন মাদক ব্যবসায়ী অথবা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১ হাজার ৩২৮ জনকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে বলেও উল্লেখ করেন কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান।
সেনা কর্মকর্তা ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, তারা গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও পটুয়াখালীতে ১৫ থেকে ১৬ নভেম্বর এবং ২০ নভেম্বর রাসমেলা ও নবান্ন উৎসব উদযাপনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। বরিশালে ১০ থেকে ১২ নভেম্বর জগধাত্রী পুজাতে নিরাপত্তা প্রদান করেছেন।
ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, সেনাবাহিনীর এই কর্মধারা বিনা বাধায় সম্পন্ন হয়নি। চলতি বছরের গত ২০ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনকালে সেনাবাহিনীর মোট ১২৩ জন সদস্য হতাহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন অফিসার শাহদাৎ বরণ করেছেন এবং ৯ জন অফিসারসহ মোট ১২২ জন সেনাসদস্য বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছেন।
কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান অভিযান সম্পর্কে কর্নেল স্টাফ ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের হাত থেকে স্থানীয় নিরীহ জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে একটি বিশেষ যৌথ অভিযান চলতি বছরের গত এপ্রিল থেকে পরিচালিত হয়ে আসছে।
সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে মানবাধিকার রক্ষা করে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালিত এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ১৭৯ জন কেএনএফ সক্রিয় সদস্য অথবা সহায়তাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রসহ মোট ৬০টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণে গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জামাদি (দূরবীন, ম্যাপ, আইডি সরঞ্জাম, ওয়াকি টকি, ইউনিফর্ম ও ল্যাপটপ ইত্যাদি) উদ্ধার করা হয়েছে। সন্ত্রাসী সংগঠনটির পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণ এবং অতর্কিত হামলায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাতজন বীর সেনা সদস্য শহিদ হয়েছেন।
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী আজ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৩০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে ৩৫ জন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০’র বেশি জনকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৫৩টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ মাত্রার। এ ছাড়াও চারজন গুরুতর আহত রোগীকে উন্নত সুচিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ইন্তেখাব হায়দার বলেন, চলতি বছরের গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাপ্টেন ও তদূর্ধ্ব পদবীর অফিসারদের সরকার কর্তৃক যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা হয়, তা গত ১৫ নভেম্বর থেকে পুনরায় ৬০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সুষ্ঠু এবং নিয়মাতান্ত্রিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর সকল পর্যায়ের সদস্যরা সচেষ্ট রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের নিরাপত্তা এবং জনগণকে সহায়তা করতে নিষ্ঠার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করছে।
কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার বলেন, দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য তাদের কর্মধারা অব্যাহত রাখতে সেনাবাহিনী অঙ্গীকারাবদ্ধ।