লাখপতির গল্প
লাখপতি হয়েছেন, এখন মিলিয়নেয়ার হওয়ার অপেক্ষায় নিপা
কুমিল্লার মেয়ে শারমিন ইসলাম নিপা। থাকেন ঢাকায়। কিন্তু কাজ করছেন সিরাজগঞ্জের তাঁতশিল্প নিয়ে। কারণ, তাঁর শ্বশুরবাড়ি সিরাজগঞ্জে। অনলাইনে শাড়ি বেচে এরই মধ্যে লাখপতি বনে গেছেন নিপা। এখন মিলিয়নেয়ার হওয়ার অপেক্ষা তাঁর।
সম্প্রতি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় শারমিন ইসলাম নিপার। তাঁর উদ্যোগের নাম ‘শাড়িওয়ালা’। বলেন, তাঁর উদ্যোক্তা-জীবন নিয়ে।
কুশল জানতেই নিপার উত্তর, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। আমার উদ্যোগ নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। এখন আপাতত ঈদের জন্য নতুন প্রোডাক্ট সোর্সিং আর ফটোগ্রাফি নিয়ে ব্যস্ত।’
নিপার জন্ম কুমিল্লায়। সেখান থেকে এসএসসি পাস করেন। এইচএসসি সম্পন্ন করেছেন শহীদ বীর উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে। এরপর বিবিএ ও এমবিএ শেষ করেন ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ থেকে।
শারমিন ইসলাম নিপা বলেন, ‘আমার সিগনেচার প্রোডাক্ট হলো তাঁতের পণ্য। পাওয়ারলুম এবং হ্যান্ডলুম—দুই ধরনের মেশিনেই তৈরি হয় আমাদের প্রোডাক্টগুলো। আমার প্রোডাক্ট ক্যাটাগরিতে আছে তাঁতের শাড়ি, থ্রি-পিস, লুঙ্গি ও গামছা। শাড়ির মধ্যে আছে হাফ-সিল্ক, কটন, ধুপিয়ান, তাঁত জামদানি, গ্যাস সিল্ক, মাশলাইশসহ সব ধরনের তাঁতের শাড়ি। লুঙ্গির মধ্যে ময়েশ্চারাইজড, কটন, চেক, বাটিক; সব ধরনের লুঙ্গি আছে। কাতান, কটন, হাফ-সিল্ক, সিল্ক; সব ধরনের থ্রি-পিস আছে। আমার সেল সাত লাখ টাকা, এর মধ্যে উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) থেকে সেল হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। উই-এর সঙ্গে জড়িত আছি গত বছরের জুন থেকে, উদ্যোক্তা-জীবনের শুরু উই-এর হাত ধরে।’
সামনে পহেলা বৈশাখ ও পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ নিয়ে পরিকল্পনা? নিপা বলেন, ‘পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে প্রোডাক্ট স্টক করেছি আরও আগে, কয়েক দিন আগে বৈশাখের শাড়ি কানাডায় পাঠালাম। উদ্যোক্তা-জীবনে এটা আমার দেশের বাইরে দেওয়া প্রথম ডেলিভারি। তাছাড়া ঈদের প্রস্তুতি তো চলছেই।’
পরিবার থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? নিপার জবাব, ‘পরিবার হলো আমার মেরুদণ্ড। সবার সাপোর্ট না থাকলে এত দূর আসতে পারতাম না। আমার শ্বশুরবাড়ি, বাবার বাড়ি—সবাই আমাকে আর আমার কাজকে অনেক শ্রদ্ধা করে। ডেলিভারি থেকে শুরু করে সোর্সিং, সব কাজে সাহায্য করে।’
নিপার উদ্যোক্তা-জীবনে উই-এর ভূমিকা অনেক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুরুতেই বলে নিই, আমার উদ্যোক্তা-জীবন শুরু হয়েছে কিন্তু উই-এর হাত ধরে। উই-এর ১১ লাখ মেম্বারের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ মেম্বার অ্যাকটিভ, তা-ও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। সবাই সবার সহযোগী, একটা পজিটিভিটি আছে গ্রুপটাতে। আমি আপনাদের মাধ্যমে ধন্যবাদ জানাতে চাই উই-এর প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপুকে, এত সম্ভাবনাময় একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য। অনেক নারীকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে, বাঁচতে শিখিয়েছে উই।’
উদ্যোক্তা হওয়ার পর মধুর স্মৃতি? নিপার ভাষ্যে, ‘আমার মধুর স্মৃতি অনেক আছে, কিন্তু সবচেয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমার পরিবার যখন আমার পরিচয় দেয় ব্যবসায়ী হিসেবে। সবাইকে খুব গর্ব করে বলে আমার কথা। তখন মনে হয়, আমি কিছুটা হলেও সার্থক। পরিবারের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে পারাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি।’
নিপা পড়াশোনা ছাড়াও বেকিং করতে ভালোবাসেন, রান্না করতে ভালোবাসেন। সময় পেলে টুকটাক ক্রাফটিং করতেও ভালোবাসেন। তো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী। বললেন, ‘আমার নিজের একটা শোরুম দেওয়ার ইচ্ছে আছে। যেখানে সবাই গিয়ে দেখে হোলসেল-রিটেইল দুভাবেই নিতে পারবেন।’
নিপার উদ্যোক্তা-জীবন সব মিলিয়ে ১০ মাস। কোনো কর্মী নেই। একাই সব সামলান। পরিবারের সবাই সাহায্য করেন তাঁকে।
লাখপতি হতে পেরেছেন? এ প্রশ্নে নিপার উত্তর, ‘আলহামদুলিল্লাহ, উদ্যোগ শুরু হওয়ার দুই মাসেই লাখপতির খাতায় নাম লিখিয়েছি। এখন আমি মিলিয়নেয়ার হওয়ার অপেক্ষায় আছি, ইনশাআল্লাহ!’
নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি নিপার পরামর্শ, ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করুন। শর্টকাটে কোনোদিন সফলতা আসে না, লেগে থাকুন, সফলতা দরজায় কড়া নাড়বেই, ইনশাআল্লাহ।’