দ্রুত বাড়ছে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি
২০১৪ সালে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি এক শতাংশ বেড়ে ২৯ দশমিক ৮৫ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা ছিল সেবা ও নির্মাণ খাতের।
তবে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে এতদিন সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন অনেক বিশ্লেষক। তাঁরা মনে করতেন, পশ্চিমাদের এড়িয়ে চলা দেশটি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে অর্থনৈতিক খরায় পড়বে কোরীয়রা।
সম্প্রতি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্লেষণ প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ২০১০ সালে উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা সংকোচন দেখা গেলেও সেখান থেকে উতরেছে পরবর্তী বছরগুলোতে। ২০১৩ সালে দেশটির অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। সে ধারা অব্যাহত ছিল গত বছর প্রতিটি প্রান্তিকে। এ ক্ষেত্রে সেবা ও ব্যক্তি খাত গত বছর বাহক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।
যে কোনো ধরনের অর্থনৈতিক প্রতিদেন প্রকাশ করে না উত্তর কোরিয়া। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনও সরকারি সত্তা হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।
রয়টার্স বলছে, উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত বছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে কালোবাজারি অর্থনৈতিক কার্যকলাপ তুলে ধরা হয়নি। তবে গত কয়েক বছরে এ ধরনের অর্থনীতির পরিসর বাড়ছে বলে জানা যায়।
গত বছর ব্যক্তি শ্রেণির ব্যবসা যেমন- কসমেটিকস, স্মার্টফোন, ফলের জুস ও বিদেশি কাপড় নিয়ে যাঁরা ব্যবসা করেছেন তাঁরা ভালো মুনাফা পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।
দেশটির জিডিপিতে (দেশজ গড় উৎপাদন) সেবা ও নির্মাণ খাত প্রধান ভূমিকা রাখতে পারলেও খামার, খনি ও উৎপাদন খাত সেভাবে অবদান রাখতে পারেনি। গত বছর এসব খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল কম।
বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার মোট জনসংখ্যা দুই কোটি ৪৭ লাখ। গত বছর উত্তর কোরিয়ার গড় জাতীয় আয় (জিএনআই) দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৯৮৫ কোটি মার্কিন ডলার। এ ক্ষেত্রে মাথা পিছু আয়ের ভিত্তিতে দক্ষিণ কোরিয়া ২১ গুণ সমৃদ্ধ।
২০১৪ সালে দেশটির সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০১৩ সালের চেয়ে দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। গত বছর দেশটির জিডিপিতে সেবা শিল্পের অবদান ছিল ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের বছরের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি।
গত বছর সেবা খাতের সব সহসূচকগুলোতে উত্থান দেখা গেছে। খুচরা বিক্রি, খাদ্য ও আবাসিক ব্যবস্থাপনাসহ সরবরাহ ও যোগাযোগেও ভালো ফল এসেছে বলে মনে করছে ব্যাংক অব কোরিয়া।
রাস্তাঘাট, প্লান্ট ইত্যাদি অবকাঠামোর নির্মাণ বাড়ায় নির্মাণ খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। যদিও ২০১৩ সালে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ১ শতাংশ কমে। পিয়ংইয়ং ঘিরে স্যাটেলাইট সিঁটি গড়ে ওঠায় এ খাতের আরো উন্নতি হবে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত বছর উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে ৭৬০ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে যন্ত্রপাতি ও বস্ত্র খাতের বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়ায় গত বছর আমদানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। ৯০ ভাগের বেশি উত্তর কোরীয় ব্যবসা হয় পার্শ্ববর্তী দেশ চীনের সঙ্গে।
পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পর ২০০৬ সালে জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করে। দক্ষিণ কোরিয়াও সব ধরনের বাণিজ্য ও সহায়তা বন্ধ করে।
এক সময় বলপূর্বক শ্রম, মৃত্যুদণ্ড ও ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ছিল উত্তর কোরিয়ায়। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট কিম জং টু-এর জনপ্রিয়তা কম না থাকলেও তিনি দুর্নাম-নিন্দাও কুড়িয়েছেন। তাঁর ১৭ বছরের শাসনামলে দেশটির তেমন পরিবর্তন হয়নি। তবে তাঁর মৃত্যুর পর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন তাঁরই ছেলে কিম জং উন। তিনি বাবার বৈশিষ্ট্য ধারণ করেননি। কিম জং উনের সময়ে জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটেছে। উত্তর কোরীয়রা এখন বিদেশিদের সঙ্গে অনেক বেশি সাবলীল।