মংলা বন্দরে বিদেশি জাহাজ ভেড়ার রেকর্ড
মংলা বন্দরে গত সপ্তাহে ১৫টি বিদেশি জাহাজ অবস্থান নেয়। এ সপ্তাহে আরো ১০-১২টি জাহাজ বন্দরে আসার কথা আছে। গত ১৫ বছরে একসঙ্গে এত জাহাজ মংলা বন্দরে অবস্থান করেনি বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে কর্মচাঞ্চল্য।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে এ বন্দরে বিদেশ থেকে আমদানি পণ্য খালাস করতে মংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া ও বেসক্রিক এলাকায় একই সঙ্গে ১৫টি জাহাজ অবস্থান নেয়। এর মধ্যে চারটি জাহাজ পণ্য খালাস শেষে বন্দর ত্যাগ করেছে। বর্তমানে বন্দর চ্যানেলে ১১টি জাহাজ আছে। এর মধ্যে একটিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যবহার করার যন্ত্রপাতি, একটিতে গম, দুটিতে কয়লা ও অন্যান্য জাহাজে আছে সার। সব জাহাজেই পণ্য খালাসের জন্য একযোগে কাজ চলেছে। আজ রোববার পর্যন্ত ১১টি জাহাজের অবস্থান ছিল এ বন্দরে।
মংলা বন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া করছেন মেসার্স নুরু অ্যান্ড সন্স কোম্পানির মালিক এইচ এম দুলাল। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মংলা বন্দরকে ঘিরে আমদানি-রপ্তানিকারকসহ বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। মংলা বন্দরে জাহাজের চলমান এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধিশালী হবে এবং উন্নয়নের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। সঙ্গে সঙ্গে পদ্মা সেতু, খানজাহান আলী বিমানবন্দর বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেছে এবং শিল্প উদ্যোক্তারা ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মংলা বন্দর ব্যবহার করতে শুরু করেছে।’
বন্দর ব্যবহারকারী শিপিং এজেন্ট শেখ বদিউজ্জামান টিটু বলেন, ‘বর্তমান সরকার বন্ধ হয়ে যাওয়া রামপাল-ঘাষিয়াখালী চ্যানেল পুনরায় খনন করে চালু করায় মংলা বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই করে নৌযানগুলো দ্রুত সময়ে এই রুট ব্যবহার করে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে।’
বিদেশি জাহাজ ভেড়ার রেকর্ডের কথা নিশ্চিত করে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বন্দরের অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হওয়ায় এরই মধ্যে নেপাল, ভুটান ও ভারত আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মংলা বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছে। মংলা বন্দর এলাকায় ২০৫ একর জমিতে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ, খুলন-মংলা রেললাইন স্থাপন ও ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে মংলা বন্দরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবে।’
বাগেরহাট-৩ আসনের (মংলা-রামপাল) সংসদ সদস্য তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘২০০৯ সালের শুরুতেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথাযথ ভূমিকা রাখার প্রয়াসে মংলা বন্দরের উন্নয়নের দিকে সরকার বিশেষ গুরুত্ব ও নজর দেয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘২০১৮ সালে মংলায় হবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। এই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে শক্তিশালী করতে খানজাহান আলী বিমানবন্দর স্থাপন ও পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এটা কোনো আশার বাণী বা স্বপ্ন নয়, এটি এখন বাস্তবতা মাত্র।’ তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের ৫ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে বিমানবন্দরের জন্য ৫৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার অনুমোদন দিয়েছেন। বিমানবন্দরের পাশাপাশি খুলনায় অত্যাধুনিক রেলস্টেশন নির্মাণ হচ্ছে এবং একই ধারাবাহিকতায় মংলার সঙ্গে খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রেল যোগাযোগের লক্ষ্যে খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রেলসেতুও নির্মাণ করা হবে।’