দুষ্টচক্রে বিশ্ব অর্থনীতি
বৈশ্বিক অর্থনীতি দুষ্টচক্রে পড়েছে। বহুমুখী সংকট ক্রমেই ঘণীভূত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছেন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা। দ্রুত সেই পথের সন্ধান মিলবে, তেমনটিও প্রত্যাশা করছেন না তাঁরা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, কয়েক বছর আগে শুরু হওয়া বৈশ্বিক অর্থনীতির সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। চলতি বছরও একই ধারায় রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি।
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের ব্যাংক সুদের হার বাড়ানো, চীনের অর্থনীতিতে ধ্স, ভোগ্যপণ্যের মূল্যের বড় ধরনের পতন এবং তেল ও সোনার দরপতন অব্যাহত থাকায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো অর্থনৈতিক ভারসাম্য হারানোয় যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক নীতি-সংক্রান্ত শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন অর্থনীতিবিদ ল্যারি সামারস বলেন, ‘দুষ্টচক্রে পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতি। এ সংকট সহজে কাটবে না; পরিত্রাণ পেতে হয়তো বহু বছর লেগে যাবে।’
ফেডারেল রিজার্ভের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন সামারস। তিনি বলেন ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেন কোনোভাবেই সুদের হার না বাড়ায়। এটি করলে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে স্থবিরতা চলছে, তা আরো প্রলম্বিত হবে। বিনিয়োগে আস্থা হারিয়ে ফেলবে শিল্পপতি ও পুঁজিপতিরা। এতে বিশ্ব অর্থনীতির ধ্স ঠেকানো যাবে না।’
সামারস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব অর্থনীতি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে ব্যাংক ঋণ নিয়ে কোনো কিছু কেনার সামর্থ্য সাধারণ মানুষের নেই। উদীয়মান দেশের বাজার ব্যবস্থায় ধসে পড়েছে। আর গতিশীল অর্থনীতির গতি থমকে গেছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান ওয়েন সোয়ান তার বক্তব্যের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ অলিভার ব্ল্যাংকার্ড অর্থনীতির এ টালমাটাল অবস্থার জন্য পুঁজিবাদী দেশগুলোকে দায়ী করেছেন। ফরাসি এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমি মনে করি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে শ্লথ-দশা ধীরে ধীরে ঘটছে। বিশেষ করে চীনে খুব ধীরগতিতে প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। তবে সংকট কেটে যাবে।’
সাম্প্রতিককালে চীনের শেয়ারবাজারে ধস ও প্রবৃদ্ধিতে ধাক্কা– এ দুটোই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে আঘাত হেনেছে। চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই ব্যাংক সুদের হার বাড়ানো মার্কিন বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য প্রবল ঝুঁকি বলে মনে করেন মার্কিন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্বের সব অঞ্চলের বাজারেই ভোগ্যপণ্যের দামে প্রায়াই বড় ধরনের ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণি তাদের সীমিত আয় দিযে সারা মাস বহু কষ্টে দিনাতিপাত করছে।
আইএমএফের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হোসে ভিনালস বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে এখনো বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়নি, কারণ উদীয়মান দেশ যেমন চীন, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, ব্রাজিল ও ইন্দোনেশিয়ার বাজার ব্যবস্থা ততটা ঝুঁকিতে আছে বলে মনে হচ্ছে না। তবে এ কথা সত্য যে এসব দেশের প্রবৃদ্ধি কমেছে।’
ভিনলসের মতে, তেল ও সোনার দামে নিম্নগামী প্রবণতা থাকায় সারা পৃথিবীর অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এভাবে প্রতিনিয়ত এ দুটি পণ্যের দাম কমায় অন্য ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে।
আইএমএফের এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালে বিশ্বের অর্থনীতির ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমতে পারে, যা হবে ২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন। যেসব উদীয়মান অর্থনীতির দেশের জিডিপিতে (মোট দেশজ উৎপাদন) ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তা দীর্ঘ মেয়াদি হতে পারে।