চলতি বছর আইপিও অনুমোদন অর্ধেক কমেছে
২০১৫ সালে আগের বছরের চেয়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদন অর্ধেক কমেছে। সে সঙ্গে কমেছে শেয়ারবাজার থেকে উত্তোলিত টাকার পরিমাণ।
বাজারে লেনদেন শুরুর পর অনেক কোম্পানির শেয়ারদর বরাদ্দ মূল্যের নিচে নেমে আসে। এ কারণে চলতি বছর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি বিধান সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে আইপিও অনুমোদন কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ১৯টি কোম্পানি বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের অনুমতি পায়। কিন্তু ২০১৫ সালে মাত্র ১০টি কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কমেছে উত্তোলিত টাকার পরিমাণ।
শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় আইপিও-সংশ্লিষ্ট বিধিতে পরিবর্তন আনছে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিধানের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নতুন বিধান অনুযায়ী, আইপিও অনুমোদন নিতে কোম্পানির গণপ্রস্তাবে স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারিশ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ ছাড়া আইপিওতে প্রিমিয়াম চাইলে তাকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। এ জন্য বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সংস্কার করা হচ্ছে।
নতুন আইন অনুযায়ী, ইস্যু ব্যবস্থাপকদের স্বচ্ছতা আরো বাড়ছে। নতুন পদ্বতিতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও আইপিওর কোটা বরাদ্দ থাকছে। স্টেকহোল্ডারদের মতামত যাচাই শেষে বিধিটি চূড়ান্ত হবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।
২০১৪ সালে আইপিওর মাধ্যমে বাজারে আসা কিছু কোম্পানি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বাজারে আসার পর কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বরাদ্দ মূল্যের নিচে নেমে আসে। তাই চলতি বছর বাজারের মন্দাবস্থায় আইপিও অনুমোদনে সতর্কতা অবলম্বন করেছে বিএসইসি।
২০১৫ সালে নয়টি কোম্পানি, একটি বিমা প্রতিষ্ঠান ও তিনটি মিউচুয়াল ফান্ডসহ মোট ১৩টি আইপিওর অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে নয়টি কোম্পানি প্রিমিয়ামসহ বাজার থেকে ৬৭৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। অনুমোদন পেলেও বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের আইপিও প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়।
চলতি বছর আইপিও অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে বস্ত্র খাতের তিনটি, গার্মেন্ট অ্যাকসেসরিজ বাজারজাতকারী দুটি ও হাঁস-মুরগির খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া প্রকৌশল, তথ্যপ্রযুক্তি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী একটি করে প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরে বুক বিল্ডিংয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে বিডিংয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড গত ৫ এপ্রিল ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকার সঙ্গে ৬২ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৭২ টাকায় বাজারে ছাড়ার অনুমোদন দেয় কমিশন। শেয়ারবাজারে তিন কোটি ৩০ লাখ শেয়ারে ছেড়ে ২৩৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি।
বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস (বিএসআরএম) লিমিটেড ডিএসইতে লেনদেন শুরু করে গত ২৭ এপ্রিল। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে এক কোটি ৭৫ লাখ শেয়ার ছেড়ে ৬১ কোটি ২৫ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ২৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩৫ টাকায় এর শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।
তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড গত ১৭ জুন ডিএসইতে লেনদেন শুরু করে। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে দুই কোটি ৪৫ লাখ ৬৬ হাজার শেয়ার ছেড়ে ৬৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা সংগ্রহ করে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ১৬ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৬ টাকায় এর শেয়ার ছাড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।
অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড গত ২৫ জুন লেনদেন শুরু করে। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে দুই কোটি শেয়ার ছেড়ে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
আমান ফিড লিমিটেড ডিএসইতে লেনদেন শুরু করে গত ১ সেপ্টেম্বর। কোম্পানিটি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ২৬ টাকা প্রিমিয়ামসহ ৩৬ টাকায় শেয়ার বিক্রির অনুমোদন পায়। আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি বাজারে দুই কোটি শেয়ার ছেড়ে ৭২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
কেডিএস অ্যাকসেসরিজের লেনদেন শুরু হয় গত ১৫ অক্টোবর। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে এক কোটি ২০ লাখ শেয়ার ছেড়ে ২৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কোম্পানিটিকে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ১০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২০ টাকা মূল্যে শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দেয় কমিশন।
সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ গত ২৩ নভেম্বর ডিএসইতে লেনদেন শুরু করে। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তিন কোটি শেয়ার ছেড়ে ৬০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কোম্পানিটিকে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ১০ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২০ টাকা মূল্যে শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দেওয়া হয়।
রিজেন্ট টেক্সটাইল গত ১৪ ডিসেম্বর লেনদেন শুরু করে। কোম্পানিটি পাঁচ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে ১৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৫ টাকায় এ শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দেওয়া হয়।
অভিহিত মূল্যে ইনফরমেশন টেকনোলজি কনসালট্যান্টস লিমিটেড আইপিওয়ের মাধ্যমে ১২ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ছিল ১০ টাকা। বাজারে এক কোটি ২০ লাখ শেয়ার ছাড়ে এ কোম্পানি।