নতুন বছরেও সংকটময় সৌদি আরব!
উপসাগরীয় দেশগুলোর অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে চেষ্টার শেষ নেই। তেলের ওপর থেকে নির্ভরতা কমাচ্ছে তারা। এর মধ্যে তেলের ওপর থেকে ভর্তুকি কমাতে দাম বাড়িয়েছে সৌদি আরব। আর এবার বাজেটে তেল থেকে ৭৩ শতাংশ আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে দেশটি।
বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে প্রতিদিন গড়ে ৯৭ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন করত সৌদি আরব। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমায় পণ্যটির উৎপাদন সংকুচিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
গত ২৮ ডিসেম্বর সৌদি সরকার ৮৪ হাজার কোটি রিয়ালের বাজেট ঘোষণা দিয়েছে। এতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫১ হাজার ৪০০ কোটি রিয়াল। আর বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৬০০ কোটি রিয়াল।
বাজেটে ব্যাপক ঘাটতি সৃষ্টি হওয়ায় ভর্তুকি কমাতে এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সৌদি সরকার। দেশটিতে পেট্রলের দাম আগে ছিল দশমিক ৬ রিয়াল বা ১২ টাকা ৬০ পয়সা। নতুন ঘোষণার ফলে এ পণ্যের দাম দাঁড়িয়েছে দশমিক ৯ রিয়াল বা ১৮ টাকা ৯০ পয়সা। নিম্নমানের পেট্রলের দাম দশমিক ৪৫ রিয়াল থেকে বাড়িয়ে দশমিক ৭৫ রিয়াল করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ছে প্রায় ৬৭ শতাংশ।
পেট্রলের পাশাপাশি প্রাকৃতিক গ্যাস, ডিজেল, কেরোসিন, বিদ্যুৎ ও পানির দামও বাড়িয়েছে সৌদি সরকার।
রয়টার্সের গত ২৯ ডিসেম্বরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে আর্থিক স্থিতি ধরে রাখতে হুমকির মুখে রয়েছে সৌদি আরব। রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলা অনির্বাচিত সৌদি সরকারের জন্যও দেশটির অর্থনৈতিক পুনর্গঠন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাজেট অধিবেশনে সৌদি অর্থমন্ত্রী ইব্রাহিম আল-আসাফ দেশটির ব্যয় সংকোচনের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি মূল্য সংযোজন কর আরোপের কথা জানান তিনি।
সৌদি আরবে ১০ লাখ বিদেশি কর্মী রয়েছে। সৌদি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিদেশি নাগরিকদের আয় থেকে এতদিন কোনো কর নেওয়া হয়নি, তবে সব সময় এমনটি চলবে না।
রয়টার্সের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, যে কোনো স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের মতো সৌদি সরকারও এতদিন ভর্তুকি ও বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তবে তেল থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়া ও করারোপের সিদ্ধান্ত রাজতান্ত্রিক সৌদি সরকারের জন্য ভয়ংকর হতে পারে।
বিজনেস ইনসাইডার খবরে বলা হয়েছে, ভর্তুকি তুলে নেওয়ায় এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে বিক্ষোভ থেকে বড় আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৩ সালে সুদানে এ ধরনের আন্দোলন সৃষ্টি হয়।
ইয়েমেনে যুদ্ধ, আইসের থেকে হুমকি ও শিয়া সম্প্রদায়ের অসন্তোষ নিয়ে সৌদি আরব আগে থেকেই সংকটে রয়েছে। এরই মধ্যে ভর্তুকি তুলে নেওয়া, তেলের দাম বাড়ানো ও করারোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। আগামীতে তেলের দাম আরো কমবে। ফলে ২০১৬ সাল দেশটির জন্য আরো সংকটময় হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।