দেশে উদ্যোক্তা বেড়েছে এক লাখ ২৬ হাজার
২০১৫ সালে ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে এক লাখ ২৬ হাজার ৫১৪ জন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে। এসব নতুন উদ্যোক্তা ২০ হাজার ৬০৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ঋণ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮৭টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ঋণ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, দেশে ৮৭টি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পাঁচটি, বিশেষায়িত তিনটি, বিদেশি নয়টি, বেসরকারি ৩১টি, ইসলামী আটটি ও নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩১টি।
ঋণ বিতরণ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি
২০১৫ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ১৬ হাজার ৮২০ জন নতুন উদ্যোক্তাকে ঋণ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৯৪৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ছয় হাজার ৩১ জন নতুন উদ্যোক্তাকে ৬৮১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ঋণ দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে অগ্রণী ব্যাংক। আর ৫৫২ জনকে ৪০৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে পিছিয়ে রয়েছে বেসিক ব্যাংক।
তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংক পাঁচ হাজার ৪৯ জন নতুন উদ্যোক্তাকে বিতরণ করেছে ২৩৬ কোটি পাঁচ লাখ টাকা।
অন্যদিকে নয়টি বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে তিনটি কোনো নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে পারেনি। বাকি ছয়টি ব্যাংক এক হাজার ৯৪৫ জন নতুন উদ্যোক্তার মধ্যে ৬৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা বিতরণ করেছে।
বেসরকারি ৩১টি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণে উদ্যোক্তা বেড়েছে ৭৮ হাজার ১৪৭ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্যোক্তা সৃষ্টি করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। ব্যাংকটি ৩৬ হাজার ৮৩ জন নতুন উদ্যোক্তার মধ্যে দুই হাজার ২২২ কোটি ৬৮ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। সবচেয়ে পিছিয়ে আছে মধুমতি ব্যাংক।
এ ছাড়া ইসলামী আটটি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ চার হাজার ১৫৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে নতুন উদ্যোক্তা বেড়েছে ১৫ হাজার ৪৯০ জন। ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। ব্যাংকটি নয় হাজার ৪১৪ জন নতুন উদ্যোক্তাকে এক হাজার ৯১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। পিছিয়ে আছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
৩১টি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা বেড়েছে নয় হাজার ৬৩ জন। বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৩৩৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে চারটি ব্যাংক কোনো ঋণ বিতরণ করেনি।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বিতরণে অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে আছে। পিছিয়ে আছে বিদেশি ব্যাংকগুলো। বিদেশি ব্যাংকগুলো এখন করপোরেট ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁকছে। অন্যদিকে রিটেইল ব্যাংকিং খাতে এসএমই ঋণ বিতরণের পরিমাণ বেড়েছে।’
স্বপন কুমার রায় আরো বলেন, ‘পাঁচ বছর আগেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাত নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পনা বা পরিকল্পিত লক্ষ্য ছিল না। এখন সবাই যাতে খাতভিত্তিক ঋণ পায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরি হয়েছে। নারী, ক্ষুদ্র ও নতুন উদ্যোক্তাকে প্রধান্য দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।’
নারী উদ্যোক্তা বাড়ছে
২০১৪ সালের নভেম্বরে নারীদের মধ্যে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদা নারী উদ্যোক্তা বিভাগ গঠন করে। ২০১৫ সালের ৮ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, প্রতিটি ব্যাংক তাদের প্রত্যেক শাখা থেকে তিনজন নারী উদ্যোক্তা খুঁজে বের করবে। প্রশিক্ষণ শেষে সবাইকে বা কমপক্ষে একজনকে অবশ্যই ঋণ দেবে। ফলে ২০১৫ সালে মোট এক লাখ ৮৮ হাজার নারী ঋণ পেয়েছে। এর পরিমাণ ২০১৪ সালের চেয়ে ২৪০ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নতুন নারী উদ্যোক্তা ১০ হাজার ১০৬ জন, যা ২০১৪ সালের চেয়ে ১৭৫ শতাংশ বেশি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের নির্বাহী পরিচালক নির্মল চন্দ্র ভক্ত বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই বিভাগ নারীদের জন্য ভিন্ন (খাতভেদে ভিন্ন) সুদের হার নির্ধারণ করেছে। এ হার অব্যাহত থাকলে নারীদের বড় একটি অংশ স্বাবলম্বী হয়ে মূল ধারায় আসবে।’
সুদের হার কমছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে এলে ঋণের প্রবাহ আরো বাড়বে। এরই মধ্যেই সুদহার অনেকটা কমে এসেছে। চলতি বছর থেকে আরো কমবে। ২০১৭ সালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ বিতরণের চেষ্টা চলছে।
নতুন উদ্যোক্তা বাড়াতে পদক্ষেপ
বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন উদ্যোক্তা বাড়াতে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। এর পর সারা দেশে ব্যাংকটির নয় হাজার ৩০০টি শাখার মধ্যে ১০ হাজারের বেশি নতুন উদ্যোক্তাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সব খাতে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে চলতি মাসের (ফেব্রুয়ারি) শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরো একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হতে পারে। এতে নতুন উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ব্যবসায় আগ্রহীদের জামানত বিহীন ১০ লাখ ও জামানত দিয়ে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণের নির্দেশনা থাকবে।