রিজার্ভ চুরির অর্থ আছে ‘মিথ্যাবাদীদের’ কাছে
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় গঠিত ফিলিপাইনের সিনেটের ব্লু রিবন কমিটির শুনানিতে যাঁরা মিথ্যা বলছেন, তাঁদের কাছেই হিসাব না মেলা এক কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ১৩৬ কোটি টাকা আছে। এ কথা বলেছেন কমিটির প্রধান সেন তিওফিস্তো গুইনগোনা।
ফিলিপাইনের পত্রিকা ইনকোয়্যারের অনলাইনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
সিনেটের ষষ্ঠ শুনানির পর গুইনগোনা বলেন, ঘটনার বিবরণ শোনার পর বোঝা গেছে, তিনটি দল এই চুরির সঙ্গে জড়িত। তৃতীয় পক্ষে কাজ করেছে ফিলিপাইনের দল। সেখানেও তিন স্তরে কাজ হয়েছে।
ফিলিপাইনে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) জুপিটার শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতো (সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহকারী অ্যাঞ্জেলা তোরেস), মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেম সার্ভিস করপোরেশন ও চীনা-ফিলিপিনো জুয়াড়ি কাম সিন ওং (কিম ওং নামে পরিচিত) এই স্তরে জড়িত।’
ফিলিপাইনের মাকাতি নগরের জুপিটার স্ট্রিটের আরসিবিসির শাখার মাধ্যমে অর্থ পাচারের বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে গুইনগোনা নেতৃত্বাধীন কমিটি। তিনি বলেন, যাঁরা মিথ্যা বলছেন, তাঁদের কাছেই অর্থ আছে। তবে মিথ্যা ধরেই সত্য বেরিয়ে আসবে।
কীভাবে মূলহোতাদের নাম ঘোষণা করা হবে—জানতে চাইলে ইনকোয়্যারের প্রতিবেদক দরিস দুমলাও আদাদিলাকে গুইনগোনা বলেন, এখনো তো তদন্ত শেষ হয়নি।
‘কিন্তু এখন আমরা বলতে পারি, এখানে বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্ন আছে। তবে বলা যায়, দেগুইতো ও ফিলরেম মালিকদের চেয়ে কিমের কথার বিশ্বাসযোগ্যতা বেশি। এ ক্ষেত্রে একেবারে বিশ্বাসযোগ্য নয় ফিলরেম’, যোগ করেন গুইনগোনা।
ফিলরেমের বক্তব্য স্পষ্ট নয়
মুদ্রা বিনিময়কারী প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের মালিক সালুদ বাতিস্তা ও তাঁর স্বামী মাইকেল কনকন বাতিস্তা। শুনানিতে তাঁরা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা হাস্যকর বলে জানিয়েছেন গুইনগোনা। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন চীনা নাগরিক তাঁদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডলার পেসোতে রূপান্তর করেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কনকন বাতিস্তার বক্তব্য হচ্ছে, তিনি চীনা ভাষা জানেন না।’
ব্লু রিবন কমিটির চেয়ারপারসন গুইনগোনা আরো বলেন, ‘কোটি কোটি ডলার ফিলরেমের মাধ্যমে পেসোতে রূপান্তর করতে বিদেশিরা কি ইশারা ভাষা ব্যবহার করেছে? কনকন বাস্তিতার এ ধরনের বক্তব্য বিশ্বাস করা কঠিন।’
‘আরেকটি বড় অসংগতি হলো ফিলরেমের দূতিয়ালি মার্ক পালমার্স সব অর্থ বণ্টন করলেও তিনি দাবি করছেন, শুধু সোলেয়ার ক্যাসিনো ও বাতিস্তার বাড়ি থেকে যে অর্থ লেনদেন হয়, সে সময় উপস্থিত ছিলেন।’
‘আসলে তারা অনেক কিছু লুকাতে চাইছে—এখানেই চরম গরমিল’, যোগ করেন গুইনগোনা।
১৩৬ কোটি টাকার হিসাব মেলেনি
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির আট কোটি ১০ লাখ ডলার বা ৬৪৮ কোটি টাকার মধ্যে ১৩৬ কোটি টাকার এখনো হিসাব মেলেনি। কিম ওং ফিলিপাইনের সিনেটের শুনানিকালে জানিয়েছেন, এই অর্থ ফিলরেমের কাছে আছে। তবে ফিলরেমের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।
কিম ওং এরই মধ্যে দেশটির অর্থ পাচার দমন কাউন্সিলের কাছে তাঁর আইনজীবীর মাধ্যমে দুই ধাপে কিছু অর্থ ফেরত দিয়েছেন। এর মধ্যে গত ৩১ মার্চ ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার বা ৩৭ কোটি চার লাখ টাকা ফেরত দেন। আর ১৯ এপ্রিল আরো ৩৪ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছেন তিনি।
কিম ওং বলেন, হিসাব না মেলা অর্থের সমাধান পাওয়া যাবে শুনানিকালে বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্যের বর্ণনা অনুয়ায়ী।