জন-উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমছে
জন-উন্নয়ন খাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কম বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা’ প্রতিবেদনের মার্চের সংখ্যায় এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নে গুরুত্বারোপ না করায় জনগণের প্রতি সরকারের দায় কমছে। বিশ্বের অন্য উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতে জনসেবা ও উন্নয়নে বরাদ্দ নিয়মিত হারে যেখানে বাড়ছে সেখানে বাংলাদেশে কমছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা-কল্যাণ ও গৃহায়নের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ খাতের অর্থ বরাদ্দ কমতে থাকলে সামনের বছরগুলোতে দারুণ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে।
২০১৩ সালে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান দেশগুলোতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) ৩২ দশমিক ২১ শতাংশ জন-উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে, তবে ওই বছর বাংলাদেশে জিডিপির ১৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছে এ খাতে। দেখা গেছে, ওই বছর সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নে প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়েও বাংলাদেশ ব্যয় কম করেছে। জন-উন্নয়নে ২০১৩ সালে ভারত জিডিপির ২৭ দশমিক ২৬ শতাংশ ও মিয়ানমার জিডিপির ২৭ দশমিক ১৮ শতাংশ ব্যয় করেছে।
উন্নয়ন অন্বেষণের তথ্য অনুসারে, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে ২০০৮ সালে (অর্থবছর জুলাই-জুন) জিডিপির ১৭ দশমিক ১ শতাংশ, ২০০৯ সালে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ, ২০১০ সালে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০১১ সালে ১৮ দশমিক ৪, ২০১২ সালে ১৬ দশমিক ৬ ও ২০১৩ সালে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালেও তা তেমন বাড়েনি। গত বছর এ খাতের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে শিক্ষা-প্রযুক্তি খাতে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ধারণা করছে, এ খাতে পরবর্তী দুই অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৫ ও ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ হারে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে।
স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ কম দেওয়া হচ্ছে। ২০০৮ সালে (অর্থবছর জুলাই-জুন) ৭ দশমিক ২, ২০০৯ সালে ৭ দশমিক ১, ২০১০ সালে ৭ দশমিক ৩, ২০১১ সালে ৭ দশমিক ১, ২০১২ সালে ৬ দশমিক ৬ ও ২০১৩ সালে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হারে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। ২০১৪ সালে এ খাতের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে (জুলাই ১৪-জুন ১৫) বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ খাতে পরবর্তী দুই অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩ ও ৫ দশমিক ৪ শতাংশ করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে।
বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, জন-উন্নয়ন খাতে সরকারের এ ধরনের সংকোচননীতি মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব খাতের বরাদ্দ বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে উন্নয়ন অন্বেষণ।