তরুণ উদ্যোক্তা
সবার জন্য বিষমুক্ত ফল ও কৃষিপণ্য
ফলের রাজা আম প্রায় সবাই পছন্দ করেন। তবে বাজার থেকে আম কেনার সময় একটাই প্রশ্ন জাগে—বিষাক্ত কোনো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়নি তো? ফলে রাসায়নিক ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সব সচেতন মানুষই চিন্তিত। একই কারণে অনেক কৃষিপণ্য কিনতে দ্বিধা করেন অনেকে। তবে আশার কথা হলো, বিষ ও রাসায়নিক ছাড়া ফল ও কৃষিপণ্য মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন অনেকেই। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছেন অনেক উদ্যোক্তাও। এমনই এক তরুণ উদ্যোক্তা রাজশাহীর মো. শামসুদ্দিন জাফর।
আমসহ বিষাক্ত রাসায়নিকমুক্ত বিভিন্ন ফল ও কৃষিপণ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন রাজশাহীর তরুণ উদ্যোক্তা শামসুদ্দিন জাফর। এ কাজে তিনি ব্যবহার করেন তাঁর ওয়েবসাইট bdagromarket.com।
২০১২ সালের কথা। অনলাইনে কাজ করার ফাঁকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় দিতেন শামসুদ্দিন জাফর। সামাজিক যোগাযোগ ও ব্লগ সূত্রে জানতে পারেন, ফরমালিনের ভয়ে অনেকেই ছেলেমেয়েদের জন্য আম কিনতে ভয় পান। শামসুদ্দিনের পরিবারের নিজস্ব আমবাগান আছে। ফরমালিনের ভয়ে থাকা মানুষের কাছে নিজেদের আম পৌঁছে দেওয়া যায় কি না, চিন্তা করলেন তিনি। যে-ই ভাবা সে-ই কাজ; কয়েকজন সিনিয়র ভাইয়ের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করেন শামসুদ্দিন। উদ্যোগের সমর্থন পান সবার কাছ থেকেই। সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০১২ সালেই বন্ধুদের সহায়তায় তৈরি করেন bdagromarket.com ওয়েবসাইট। এ ছাড়া ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে ব্যবহার করেন অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যম।
বিভিন্ন মাধ্যমে অনেকেই শামসুদ্দিনের উদ্যোগের বিষয়টি জানতে পারেন। অনেকে অর্ডার করেন। ভোক্তার সন্তুষ্টি থেকে একইজনের কাছ থেকে বহুবার অর্ডার পান। দেশের বাইরে থেকেও ফল পাঠানোর অর্ডার পান শামসুদ্দিন। সৌদি আরব, লন্ডন, দুবাইসহ ফল পাঠিয়েছেন কয়েকটি দেশে। এভাবেই এগিয়ে চলে তাঁর উদ্যোগ।
কৃষিভিত্তিক উদ্যোগ বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে শামসুদ্দিন জানান, স্কুলে থাকা অবস্থায়ই কৃষির প্রতি তাঁর অন্য রকম আকর্ষণ ছিল। কিন্তু এইচএসসি পাস করার পর পারিবারিক চাপে বেছে নিতে হয় ভিন্ন বিষয়। ২০০৯ সালে রাজশাহী কলেজে অনার্সে ভর্তি হন। পাশাপাশি চলতে থাকে অনলাইনে পার্টটাইম কাজ। এ সময় ekrishi.com নামক ওয়েবসাইটের তথ্য সমৃদ্ধ করার কাজ পান। এই কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের কৃষির অবস্থা সম্পর্কে বেশ জানাশোনা হয়। পরে ২০১২ সালে নিজেই রাসায়নিকমুক্ত ফল ও কৃষিপণ্য বিপণনে সম্পৃক্ত হন।
উদ্যোগের শুরুতে পরিবার থেকে বাধার সম্মুখীন হন শামসুদ্দিন। পরে পরিবার উদ্যোগের বিষয়টি মেনে নেয়। তবে উদ্যোগের পুঁজি নিয়ে শামসুদ্দিনকে তেমন ঝামেলা পোহাতে হয়নি। কারণ, বড় অঙ্কে কোনো বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়নি। ওয়েবসাইটও তৈরি হয়েছে বন্ধুদের সহায়তায়। আর আমের সময়ে কয়েকশ গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে কর্মীসংখ্যা ৩০ জন হয়। অন্যান্য সময়ে কর্মীসংখ্যা বেশ কমে আসে। শামসুদ্দিন বলেন, এ মুহূর্তে তিনি শুধু কিছু মৌসুমি কৃষিপণ্য সরবরাহ করছেন। তবে তাঁর আশা, একসময় সব ধরনের কৃষিপণ্য সারা বছর সরবরাহ করতে পারবেন।
মো. শামসুদ্দিন তাঁর উদ্যোগের স্বীকৃতি পেয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। চলতি বছর চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব গ্রুপের পক্ষ থেকে নবীন উদ্যোক্তা স্মারক-২০১৪ পেয়েছেন। এর আগেও তিনি এমন সম্মাননা পেয়েছেন। তবে শামসুদ্দিন বলেন, তাঁর কয়েকশ গ্রাহক, কিন্তু কোনো পণ্য নিয়ে কখনো অভিযোগ হয়নি। তাঁর কাছে এটিই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
তরুণ উদ্যোক্তা মো. শামসুদ্দিন রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত কৃষিপণ্য নিজেই উৎপাদন করতে আগ্রহী। সারা বছর সব ধরনের কৃষিপণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে চান তিনি। শুধু দেশই নয়, বিদেশেও কৃষিপণ্য ও ফল রপ্তানিতে সফল হতে চান শামসুদ্দিন।