তরুণ উদ্যোক্তা
দেশে বসে বৈদেশিক মুদ্রা আয়
দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও ইন্টারনেটের গতিবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এতে সংশ্লিষ্ট কর্মজীবীর সংখ্যাও বাড়ছে। প্রযুক্তিজ্ঞান ও ইন্টারনেটসেবা ব্যবহার করে অনেকে দেশে বসেই বিদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেন। এই খাতে অনেক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়েছে, যাঁরা দেশের জন্য আয় করছেন বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। অনলাইনে কাজ করার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তারা তৈরি করছেন নতুন অনেক পেশাজীবী।
অনলাইনে কাজের অনেক তরুণ উদ্যোক্তার একজন রংপুরের দেওয়ান সাহেদুর রহমান। বিদেশে বিভিন্ন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের কাজের জন্য কয়েকজন কর্মী নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন স্কিলড হোম সফট। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে অনলাইনে নতুন পেশাজীবী গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।
এইচএসসি পাসের পরই গুরুত্বসহকারে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিকল্পনা করেন দেওয়ান সাহেদুর রহমান। চাকরি নয় বরং যুক্তি, মুক্তচিন্তা ও সৃজনশীল কিছু করবেন বলে ঠিক করেন তিনি। এই লক্ষ্য থেকেই ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ভার্তি হন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। এরপর থেকেই বই ও অনলাইনের মাধ্যমে প্রোগ্রামিং শেখা ও গাণিতিক সমস্যা সমাধান নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এভাবেই চলতে থাকে কম্পিউটার সায়েন্সের বিভিন্ন প্রায়োগিক দিক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন। এ সময় বিভিন্ন প্রযুক্তিবিদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্প উদ্বুদ্ধ করে সাহেদুরকে। পড়াশোনা চলা অবস্থায়ই ২০১১ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) আয়োজিত পাঁচদিনের এক কর্মশালায় অংশ নেন তিনি। এখানে প্রশিক্ষক ছিলেন বেসিস পুরস্কার-প্রাপ্ত ফ্রিল্যান্সার আলামিন চৌধুরী এবং বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান। এই কর্মশালার মাধ্যমে নিজের জগৎকে সঠিকভাবে চেনেন দেওয়ান সাহেদুর রহমান। ওই কর্মশালা থেকে অনলাইনে কাজে উদ্বুদ্ধ হন তিনি।
প্রথমদিকে সাহেদুর রহমান ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনলাইনে কাজ করতেন। পরে ধীরে ধীরে দক্ষতা বাড়ান। বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য দুই বছর অনলাইনে কাজ করেন। প্রোগ্রামিং সি++, জাভা, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ইন্টারনেট মার্কেটিং, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করেন। সবশেষে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ও ইন্টারনেট মার্কেটিংকে উদ্যোগের বিষয় হিসেবে বেছে নেন। ২০১২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন স্কিলড হোম সফট। এরপর ধীরে ধীরে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মী যুক্ত হতে থাকে।
প্রাথমিকভাবে সাহেদুরের তেমন পুঁজি প্রয়োজন হয়নি। মূল প্রয়োজন ছিল উচ্চগতির ইন্টারনেট ও কম্পিউটার। ২০১২ সালের দিকে উচ্চগতির ইন্টারনেট অনেকটা সহজলভ্য হয়ে ওঠে। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের মধ্যে দিয়ে দক্ষতা বাড়তে থাকে। সাহেদুর নিজে নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে দক্ষ। তাঁর প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়া অপর ছয়জনের প্রত্যেকে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ।
প্রতিষ্ঠানের শুরুর দিকে বিভিন্নভাবে প্রযুক্তিগত ও ইন্টারনেটের গতি নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন সাহেদুর। তবে বর্তমানে এসব সমস্যার অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন।
দেওয়ান সাহেদুর রহমানের প্রতিষ্ঠান স্কিলড হোম সফট এরই মধ্যে কয়েকটি সম্মাননা অর্জন করেছে। ২০১৪ সালে জেনেভায় আয়োজিত ১৫তম ইন্টারন্যাশনাল স্টার অ্যাওয়ার্ড ফর কোয়ালিটি- গোল্ড ক্যাটাগরি সম্মাননা অর্জন করে স্কিলড হোম সফ্ট। আর চলতি মাসে রাজধানীর বাংলামোটরে আয়োজিত ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ গ্রুপের পক্ষ থেকে নবীন উদ্যোক্তা স্মারক-২০১৪ পান সাহেদুর রহমান।
সাহেদুর রহমানের স্কিলড হোম সফট গত ২০১৪ সালে আয় করেছে ১৫ লাখ টাকা। তিনি নিজস্ব অর্থায়নে মাঝারি পরিসরে রংপুরে একটি কার্যালয় করেছেন। সেখানে প্রযুক্তি বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সুযোগ রাখা হয়েছে। সাহেদুরের লক্ষ্য, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা এবং উত্তরবঙ্গে আরো কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা।
বাংলাদেশ সরকারের কাছে সাহেদুরের একটাই দাবি—পেপ্যাল চালু। এর মাধ্যমে আয়কৃত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনা আরো সহজ হবে।