তরুণ উদ্যোক্তা
অনলাইনে পণ্য কিনতে সাইফুলের আমারগেজেট
বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের সেবা খাত সৃষ্টি হয়েছে। অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা এমনই একটি। অনলাইনে কেনাকাটার বিষয়টি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে পণ্য বিক্রির ওয়েবসাইটের সংখ্যাও বাড়ছে। অল্প পুঁজির কারণে অনেক তরুণ এই খাতে উদ্যোগ নিয়েছেন।
অনলাইনে পণ্য কেনাকাটার ওয়েবসাইট আমারগেজেট (Amargadget.com)। তরুণ উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলামের এই পণ্য বিক্রির ওয়েবসাইটটি এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে দেশের মানুষ ব্যতিক্রমী কিছু পণ্যও কেনার সুযোগ পাচ্ছেন।
ছোটবেলা থেকেই স্বাধীনভাবে কাজ করার স্বপ্ন দেখতেন সাইফুল ইসলাম। কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরিবর্তে নিজেই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন ছিল তাঁর। এই লক্ষ্য থেকেই এইচএসসি পাসের পর রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ে ভর্তি হন সাইফুল।
২০১৩ সালের কথা। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ বর্ষে ছিলেন সাইফুল ইসলাম। পড়াশোনার অবসরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্লগে সময় কাটাতেন। একদিন একটি ব্লগে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) সাধারণ সম্পাদক মুনীর হাসানের একটি লেখা পড়ে ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হন। এখান থেকেই উদ্যোক্তা সম্পর্কিত অনেক পোস্ট, চিন্তাভাবনা ও মতামত দেখেন। ওই গ্রুপের একটি কর্মশালায় অংশ নিয়ে নিজেও উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যেই ভাবা সেই কাজ। কয়েক হাজার টাকা ধার করেই ২০১৩ সালের মাঝামাঝি গড়ে তোলেন ফেসবুকভিত্তিক পণ্য বিক্রয় গ্রুপ ও পণ্য বিক্রয়ের ওয়েবসাইট Amargadget.com।
অনলাইনে পণ্য বিক্রিকেই উদ্যোগ হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে সাইফুল ইসলাম বলেন, ওই সময় বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটা ধারণাটি ছিল নতুন। এখনো এই খাতে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে। অনেকদিন থেকেই এই খাত নিয়ে তাঁর কাজের ইচ্ছে ছিল।
আমারগেজেটের শুরুতে সাইফুল ইসলাম একাই কাজ করতেন। ছয় মাসের মাথায় খণ্ডকালীন হিসেবে একজন কর্মী নিয়োগ করেন। পরে ধীরে ধীরে কয়েকজন পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন কর্মী নিয়োগ করেন। বর্তমানে তাঁর পূর্ণকালীন কর্মী ছয়জন ও খণ্ডকালীন তিনজন। দুই বছরে তাঁর সাইট ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আমারগেজেটের পথচলার শুরুটা মোটেই মসৃণ ছিল না। প্রথম দিকে পণ্য ভোক্তার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া নিয়ে অনেক সমস্যায় পড়েছেন সাইফুল। তাঁর মতে, বাংলাদেশের কুরিয়ার সার্ভিসগুলো এখনো ই-কমার্সবান্ধব হয়ে ওঠেনি। পরে নির্দিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিস তাদের উদ্যোগে এগিয়ে আসে। ওই কুরিয়ারের মাধ্যমে ভোক্তার বাড়িতে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার সমস্যা দূর হয়। এ ছাড়া ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অনলাইনে পণ্য কেনার বিষয়টি অতটা জনপ্রিয় ছিল না। ধীরে ধীরে এটি জনপ্রিয় হয়। বর্তমানে অনলাইনে পণ্য কেনার সঙ্গে দেশের মানুষ মোটামুটি পরিচিত বলা চলে।
সাইফুল ইসলাম তাঁর উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে টানা দুই বছর উদ্যোক্তা সম্মাননা পেয়েছেন। চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রথম উদ্যোক্তা স্বীকৃতি পান ২০১৪ সালে। চলতি বছর ১০ এপ্রিল রাজধানীর বাংলামোটরে চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব গ্রুপের পক্ষ থেকে আবার উদ্যোক্তা সম্মাননা পান সাইফুল।
তরুণ উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলামের বর্তমান লক্ষ্য বাংলাদেশের প্রথম সারির ই-কমার্স হিসেবে আমারগেজেটকে প্রতিষ্ঠিত করা। পরে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়ার ই-কমার্স সাইট হিসেবে পরিচিতি পাওয়া।
ই-কমার্সকে এগিয়ে নেওয়ায় সরকারের অনেক কিছু করার আছে বলে মনে করেন সাইফুল। তাঁর মতে, এই খাতকে জনপ্রিয় করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। ই-কমার্স জনপ্রিয় হলে আরো অনেক উদ্যোক্তা এই খাতে এগিয়ে আসবেন। এই খাতে আরো বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, এতে বেকারত্বও কমে আসবে।