বাংলাদেশ বিনিয়োগের উৎকৃষ্ট গন্তব্য : বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ‘সস্তা শ্রম ও অন্যান্য সুবিধা বিবেচনা করলে বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য উৎকৃষ্ট গন্তব্য।’
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকার পূবার্চলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে তিন দিনব্যাপী দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করছে বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) ও ঢাকার চীন দূতাবাস।
বিআরআই হচ্ছে একটি চীনা প্রকল্প। ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর সূচনা করেন। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে উন্নত করার চেষ্টা করা।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং চীনের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত, এনার্জি, টেক্সটাইল এবং অটোমোবাইল টেকনোলজিতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে বিডায় চীনের ১৭৪টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে। যেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ হবে প্রায় ১২৩ কোটি ডলার।’
স্বাস্থ্য, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের জন্য চীনা ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। আগামী ১০ বছর বিনাশুল্কে কাঁচামাল আমদানি করা যাবে। বিনিয়োগে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। এদেশে বিনিয়োগ করে বিদেশিরা সহজেই তাদের মুনাফা নিয়ে যেতে পারবেন।’
এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সস্তা শ্রমের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখানে সাড়ে ছয় কোটির বেশি প্রশিক্ষিত যুবশক্তি চাকরির বাজারে কাজ করছে। যেখানে এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোতে শ্রমিকের মজুরি ৩০০ ডলারের বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে একজন শ্রমিকের গড় মজুরি ১৮০ থেকে ২৬০ ডলার, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। এই সস্তা শ্রমিক ও অন্যান্য সুবিধা বিবেচনা করলে বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য উৎকৃষ্ট গন্তব্য।’
অনুষ্ঠানে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ইয়ান হুয়ালং বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৭০টি চাইনিজ কোম্পানি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া ১৫টি কোম্পানির দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক হেডকোয়াটার্স বাংলাদেশে। আইটি, স্বাস্থ্য, অ্যাগ্রো, ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে।’
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার প্রশংসা করে ইয়ান হুয়ালং বলেন, ‘করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের বৈশ্বিক সংকটেও বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এটি খুবই ইতিবাচক দিক। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনাময়। চীন সরকারের পক্ষ থেকে চাইনিজ কোম্পানি ও শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হয় বাংলাদেশে আসার জন্য। চীন প্রতিদিন প্রায় ৫০০ ভিসা ইস্যু করছে বাংলাদেশিদের জন্য।’
চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের (সিইএবি) প্রেসিডেন্ট কে চাংলিয়াং বলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে চাইনিজ কমিউনিটির জন্য সেকেন্ড হোম। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনেশিয়েটিভের কার্যক্রম চালানোর জন্য ঢাকায় একটি আঞ্চলিক হেডকোয়ার্টার স্থাপনের চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বহু বছর ধরে চীনা কোম্পানিগুলো কাজ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে যেভাবে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অন্য কোনো দেশের সঙ্গে তা গড়ে ওঠেনি।’
অনুষ্ঠানে বলা হয়, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ১০ বছর পূর্তিতে শীর্ষ চাইনিজ কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণে এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান, ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ চায়না চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিসিসিআই) সভাপতি গাজী গোলাম মতুর্জা।