রাজস্ব আহরণ চ্যালেঞ্জিং, অর্জনে কঠোর হচ্ছে এনবিআর
আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হচ্ছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এই বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে রাজস্ব আহরণ করতে হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমাণ রাজস্ব আহরণ বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেট উপস্থাপনায় অর্থমন্ত্রী ৩২৯ পৃষ্ঠার বাজেটের সারাংশ সংসদ সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করবেন।
প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের আসন্ন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হচ্ছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এর ঘাটতি ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ ও দেশের ব্যাংকগুলোর উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। চলতি বাজেটের চেয়ে আসন্ন বাজেটের আকার ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আসন্ন অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। সেখানে বাজেটে ঘাটতি থাকছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের। অপরদিক আসন্ন অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আহরণ করতে হচ্ছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হাজার কোটি বেশি। এমন অবস্থায় আসন্ন অর্থবছরের এতো বড় টার্গেটের রাজস্ব আহরণ বড় চ্যালেঞ্জিং। সরকারের দেওয়া এই রাজস্ব আহরণ টার্গেট পূরণ করতে এনবিআরকে অনেক কঠোর হচ্ছে। বাজেটে কাটছাঁট করতে হচ্ছে অনেক খাতের।
রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, “প্রতিবার যখন বাজেট টার্গেট দেওয়া হয়, তখন এনবিআরের আসল অসহায়ত্বটা প্রকাশ পায়। সক্ষমতা হিসাব না করে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে টার্গেট দেওয়া হয়, বলা হয় এই টার্গেটটা পূরণ করতে হবে। তাই টার্গেটের সঙ্গে মিল রেখে অন্যান্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। তখন ইনোভেটিভ কোনো চিন্তা, রিফর্মের কোনো চিন্তা; কোনো কিছু করার সুযোগ থাকে না। আমাদের শুধু ওই টার্গেটের পেছনে ছুটতে হয়।”
এনবিআর থেকে সর্বশেষ পাওয়া তথ্যানুসারে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আহরণ করেছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। ঘাটতি থাকলেও রাজস্ব আহরণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হয় চলতি অর্থবছরের শেষ দুই মাসে (মে ও জুন) এনবিআরকে ৯৬ হাজার ৪১৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আহরণের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুল্কে আহরণ হয়েছে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ৮২ হাজার ৫২২ কোট ২৮ লাখ টাকা, মূল্য সংযোজন করে (মূসক বা ভ্যাট) ১৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ১ লাখ ১৩ হাজার ৭০৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অপরদিকে আয়করে ১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে আহরণ ৯৩ হাজার ১৪৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা।